খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে যায় মৌমিতার। খানিকটা আতংকে। সম্প্রতি তার সব কাজেই একটা অনীহা। ক্লাস পরীক্ষা এগিয়ে আসছে দ্রুততার সাথে। পড়াশুনাতে খুব একটা মন নেই। ঘুম থেকে উঠেই এক গ্লাস পানি পান করে ও। ভাবতে থাকে ওর সেই সোনালী দিনগুলোর কথা। কত আনন্দ আর ভালোবাসায় ভরা ছিলো তার সেই দিনগুলো! ফয়সালের সাথে পরিচয়ের সেই প্রাথমিক দিনগুলো!
বিশ্ববিদ্যালয়ের একই ডিসিপ্লিনে ভর্তি হয়েছিলো ওরা দু’জন। প্রথম দিকটায় সামান্য বন্ধুতা। সব কাজেই কেমন একটু আগ বাড়িয়ে সহায়তা করতো ও। ক্লাস নোট লিখতে সাহায্য করা, এসাইনমেন্ট-এর ম্যাটেরিয়াল গুলো যোগাড় করে দেয়া, রেজিষ্ট্রেশানের সময় ব্যাঙ্কের ঝামেলা মেটানো অথবা বাড়ি যাওয়ার সময় গাড়ির টিকিট কেটে দেয়া—এ সবকিছুতেই ফয়সালকে একেবারে হাতের কাছে পেতো মৌমিতা। ওর এই কাছে থাকাটা মৌমিতার ভালো লাগতো। একটা সময় এমন এলো যে ফয়সাল ছাড়া ক্যাম্পাসে মৌমিতা অসহায় বোধ করতে লাগলো। এভাবেই ফয়সালের প্রতি মৌমিতার ভালোবাসা জন্মালো কিনা সে জানেনা। কিন্তু ফয়সাল প্রথম থেকেই ভালোবাসতো মৌমিতাকে। খুব সাধারণ কিন্তু মিষ্টি একটা মেয়ে মৌমিতা। প্রথম দেখায় ভালো লাগার মত দুর্দান্ত রুপসী না হলেও ফয়সালের প্রচন্ড ভালো লেগেছিলো। তারপর থেকে আর কখনো আলাদা ভাবেনি ওরা।
কতদিন এমন পার হয়েছে যে সারাটা সময় দু’জন একসাথে থেকেছে। সকালে হল থেকে বের হয়ে ফয়সালের সাক্ষাৎ আর সন্ধ্যায় হলে প্রবেশ অবধি। এর মাঝে কতকিছু হয়ে যেত, কিন্তু দু’জনে একসাথে থেকেই করতো। ক্লাস শেষ করে আর হলে ফিরে আসেনি মৌমিতা। ফয়সালের সাথে থেকে দীর্ঘ সময় গল্প করে কাটিয়েছে। কত ভালোবাসায় মাখামাখি ওদের সেই দিনগুলো! বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক উৎসবমুখর দিন পার করেছে একই সাথে। নবীনবরণ, বর্ষবরণ, র্যা ড ডে’ এমন প্রত্যেকটা দিনেই ফয়সালের কথা ভেবেই দিনের প্রোগ্রাম সাজাতো মৌমিতা। এমন বিশেষ দিন, আর ফয়সালকে ছাড়া কি এক মুহুর্তও ভাবা যায়? কত আনন্দঘনই না ছিলো তার প্রতিটা মুহুর্ত! মাঝে মাঝে ভাবতো মৌমিতা- এই ক্যাম্পাসটাকে ও বোধহয় অনেক বেশি ভালোবাসে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবতো, ওর ক্যাম্পাসের প্রতি সকল ভালোবাসা আসলে ফয়সাল আছে বলে। ফয়সালকে ভালোবাসে বলেই ক্যাম্পাসের সব কিছু ওর এত অধিক ভালো লাগে। ক্লাস থেকে বের হয়ে ফয়সালের সাথে দাঁড়িয়ে ফুসকা খাওয়ার দিনগুলোকে মনে হতো সোনা দিয়ে বাঁধা। স্মৃতির নিউরনে সেই দিনগুলো এমন স্থির হয়ে আছে যে মন থেকে ও কখনো এই আনন্দ আর ভালোবাসার দিনগুলো মুছে ফেলতে পারবেনা।
বন্ধের দিনগুলো সব থেকে বেশি প্রিয় ছিলো মৌমিতার। এই দিনে সারাদিন ফয়সালের সাথে থাকা যায়। ক্লাস করার বা এগজাম নিয়ে ভাবার একটুও দরকার ছিলোনা ওর। শুধু ফয়সাল আর ফয়সাল। মাঝে মাঝে ঘুরতে যেত ওরা। বাইপাস দিয়ে একেবারে শহরের আরেক প্রান্তে, ফয়সালের হাত ধরে শহরের অলি-গলি সব জায়গাতে। ছুটির দিনের বিকালটা আজও শিহরিত করে মৌমিতাকে। ছুটির দিনের প্রায় প্রতিটা বিকেলই ওরা নানামুখী প্রোগ্রামে সাজাতো। বিকেলের স্নিগ্ধ নরম রোদে ফয়সালের সাথে নৌকায় করে নদীতে ভাসার মজাটাই আলাদা। ভালোলাগা যে ভালোলাগা—ফয়সাল আছে বলেই তা বুঝতে পারতো মৌমিতা। অথবা এমন ছিলো যে পুরোটা বিকেলই রিক্সায় করে ঘুরেছে সারাটা শহর। খুনসুটিও যে মাঝে মাঝে হতো না এমন নয়। কিন্তু এসবই ছিলো তার নিরন্তর ভালোবাসার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
একদিনের কথা মনে আছে ওর। রাত তখন প্রায় তিনটা বাজে। কিন্তু ফয়সালকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে। অথচ, হল থেকে বের হয়ে দেখা করার তো প্রশ্নই ওঠেনা। ফয়সালকে জানিয়েছিলো ফোনে। সেই ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যেও ছুটে এসেছিলো ফয়সাল। হলের জানালা দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ফয়সালকে একনজর দেখতে পেয়েছিলো। ওর মনে হয়েছিলো, এত ভালোবাসা কি ও সইতে পারবে?
সত্যিই আর কপালে সয়নি এই গভীর ভালোবাসা। একসময় সবকিছু ফিকে হয়ে যেতে লাগলো। অনুরাগ থেকে অভিমান, আর সেই অভিমান যে কখন অভিযোগে পরিণত হয়েছিলো তা ঘুর্ণাক্ষরেও জানতে পারেনি ও। ঝগড়া আর কথা-বন্ধ-রাখা এখন তার নিত্যসঙ্গী। প্রায়সই কথা বন্ধ হয়ে যায় ওদের মাঝে। দীর্ঘ প্রায় চারটি বছর একসাথে থেকেছে বলে এক অন্যরকম মায়া জড়িয়ে গেছে ফয়সালের প্রতি। ছেড়ে আসতে মন চায়না। কিন্তু এই দুঃসহ যন্ত্রণাও তো আর সহ্য করা যায়না। একে অপরের প্রতি আর একটুও সম্মানবোধ নেই দু’জনের। মাঝে মাঝে নিজের কাছে নিজেকে অসহ্য মনে হয় মৌমিতার। গতরাতে তীব্র কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ফোন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় ও। ফোন কেটে দেয়ার আগের কথাটা কানে বাজে ওর, “তুমিই আমার জীবনে একমাত্র দুঃখের কারণ।” যাকে নিয়ে দিনের প্রতিটা মুহুর্ত সাজিয়ে প্রোগ্রাম তৈরি করতো, তার কাছ থেকে শোনা এই কথা কেমন করে সহ্য করবে ও? সকালবেলা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকে এসবই ভাবতে থাকে মৌমিতা। ও জানে, আর কোন দিন ফোন করবে না ফয়সাল। মৌমিতাও আর যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেনা। এতবড় কথা যার মুখ দিয়ে বের হয়, আর যাই হোক, অন্ততঃ তার সাথে থাকার কথা ভাবা যায়না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একই ডিসিপ্লিনে ভর্তি হয়েছিলো ওরা দু’জন। প্রথম দিকটায় সামান্য বন্ধুতা। সব কাজেই কেমন একটু আগ বাড়িয়ে সহায়তা করতো ও। ক্লাস নোট লিখতে সাহায্য করা, এসাইনমেন্ট-এর ম্যাটেরিয়াল গুলো যোগাড় করে দেয়া, রেজিষ্ট্রেশানের সময় ব্যাঙ্কের ঝামেলা মেটানো অথবা বাড়ি যাওয়ার সময় গাড়ির টিকিট কেটে দেয়া—এ সবকিছুতেই ফয়সালকে একেবারে হাতের কাছে পেতো মৌমিতা। ওর এই কাছে থাকাটা মৌমিতার ভালো লাগতো। একটা সময় এমন এলো যে ফয়সাল ছাড়া ক্যাম্পাসে মৌমিতা অসহায় বোধ করতে লাগলো। এভাবেই ফয়সালের প্রতি মৌমিতার ভালোবাসা জন্মালো কিনা সে জানেনা। কিন্তু ফয়সাল প্রথম থেকেই ভালোবাসতো মৌমিতাকে। খুব সাধারণ কিন্তু মিষ্টি একটা মেয়ে মৌমিতা। প্রথম দেখায় ভালো লাগার মত দুর্দান্ত রুপসী না হলেও ফয়সালের প্রচন্ড ভালো লেগেছিলো। তারপর থেকে আর কখনো আলাদা ভাবেনি ওরা।
কতদিন এমন পার হয়েছে যে সারাটা সময় দু’জন একসাথে থেকেছে। সকালে হল থেকে বের হয়ে ফয়সালের সাক্ষাৎ আর সন্ধ্যায় হলে প্রবেশ অবধি। এর মাঝে কতকিছু হয়ে যেত, কিন্তু দু’জনে একসাথে থেকেই করতো। ক্লাস শেষ করে আর হলে ফিরে আসেনি মৌমিতা। ফয়সালের সাথে থেকে দীর্ঘ সময় গল্প করে কাটিয়েছে। কত ভালোবাসায় মাখামাখি ওদের সেই দিনগুলো! বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক উৎসবমুখর দিন পার করেছে একই সাথে। নবীনবরণ, বর্ষবরণ, র্যা ড ডে’ এমন প্রত্যেকটা দিনেই ফয়সালের কথা ভেবেই দিনের প্রোগ্রাম সাজাতো মৌমিতা। এমন বিশেষ দিন, আর ফয়সালকে ছাড়া কি এক মুহুর্তও ভাবা যায়? কত আনন্দঘনই না ছিলো তার প্রতিটা মুহুর্ত! মাঝে মাঝে ভাবতো মৌমিতা- এই ক্যাম্পাসটাকে ও বোধহয় অনেক বেশি ভালোবাসে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবতো, ওর ক্যাম্পাসের প্রতি সকল ভালোবাসা আসলে ফয়সাল আছে বলে। ফয়সালকে ভালোবাসে বলেই ক্যাম্পাসের সব কিছু ওর এত অধিক ভালো লাগে। ক্লাস থেকে বের হয়ে ফয়সালের সাথে দাঁড়িয়ে ফুসকা খাওয়ার দিনগুলোকে মনে হতো সোনা দিয়ে বাঁধা। স্মৃতির নিউরনে সেই দিনগুলো এমন স্থির হয়ে আছে যে মন থেকে ও কখনো এই আনন্দ আর ভালোবাসার দিনগুলো মুছে ফেলতে পারবেনা।
বন্ধের দিনগুলো সব থেকে বেশি প্রিয় ছিলো মৌমিতার। এই দিনে সারাদিন ফয়সালের সাথে থাকা যায়। ক্লাস করার বা এগজাম নিয়ে ভাবার একটুও দরকার ছিলোনা ওর। শুধু ফয়সাল আর ফয়সাল। মাঝে মাঝে ঘুরতে যেত ওরা। বাইপাস দিয়ে একেবারে শহরের আরেক প্রান্তে, ফয়সালের হাত ধরে শহরের অলি-গলি সব জায়গাতে। ছুটির দিনের বিকালটা আজও শিহরিত করে মৌমিতাকে। ছুটির দিনের প্রায় প্রতিটা বিকেলই ওরা নানামুখী প্রোগ্রামে সাজাতো। বিকেলের স্নিগ্ধ নরম রোদে ফয়সালের সাথে নৌকায় করে নদীতে ভাসার মজাটাই আলাদা। ভালোলাগা যে ভালোলাগা—ফয়সাল আছে বলেই তা বুঝতে পারতো মৌমিতা। অথবা এমন ছিলো যে পুরোটা বিকেলই রিক্সায় করে ঘুরেছে সারাটা শহর। খুনসুটিও যে মাঝে মাঝে হতো না এমন নয়। কিন্তু এসবই ছিলো তার নিরন্তর ভালোবাসার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
একদিনের কথা মনে আছে ওর। রাত তখন প্রায় তিনটা বাজে। কিন্তু ফয়সালকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে। অথচ, হল থেকে বের হয়ে দেখা করার তো প্রশ্নই ওঠেনা। ফয়সালকে জানিয়েছিলো ফোনে। সেই ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যেও ছুটে এসেছিলো ফয়সাল। হলের জানালা দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ফয়সালকে একনজর দেখতে পেয়েছিলো। ওর মনে হয়েছিলো, এত ভালোবাসা কি ও সইতে পারবে?
সত্যিই আর কপালে সয়নি এই গভীর ভালোবাসা। একসময় সবকিছু ফিকে হয়ে যেতে লাগলো। অনুরাগ থেকে অভিমান, আর সেই অভিমান যে কখন অভিযোগে পরিণত হয়েছিলো তা ঘুর্ণাক্ষরেও জানতে পারেনি ও। ঝগড়া আর কথা-বন্ধ-রাখা এখন তার নিত্যসঙ্গী। প্রায়সই কথা বন্ধ হয়ে যায় ওদের মাঝে। দীর্ঘ প্রায় চারটি বছর একসাথে থেকেছে বলে এক অন্যরকম মায়া জড়িয়ে গেছে ফয়সালের প্রতি। ছেড়ে আসতে মন চায়না। কিন্তু এই দুঃসহ যন্ত্রণাও তো আর সহ্য করা যায়না। একে অপরের প্রতি আর একটুও সম্মানবোধ নেই দু’জনের। মাঝে মাঝে নিজের কাছে নিজেকে অসহ্য মনে হয় মৌমিতার। গতরাতে তীব্র কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ফোন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় ও। ফোন কেটে দেয়ার আগের কথাটা কানে বাজে ওর, “তুমিই আমার জীবনে একমাত্র দুঃখের কারণ।” যাকে নিয়ে দিনের প্রতিটা মুহুর্ত সাজিয়ে প্রোগ্রাম তৈরি করতো, তার কাছ থেকে শোনা এই কথা কেমন করে সহ্য করবে ও? সকালবেলা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকে এসবই ভাবতে থাকে মৌমিতা। ও জানে, আর কোন দিন ফোন করবে না ফয়সাল। মৌমিতাও আর যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেনা। এতবড় কথা যার মুখ দিয়ে বের হয়, আর যাই হোক, অন্ততঃ তার সাথে থাকার কথা ভাবা যায়না।