|| বাংলার নবাবের ওয়েবসাইটে স্বাগতম ||
আমি রুষে উঠে যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া | ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া।

শনিবার, ১৩ মার্চ, ২০১০

শেষের কবিতা

শেষের কবিতা
---রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

কালের যাত্রার ধ্বণি শুনিতে কি পাও
তারি রথ নিত্যই উধাও
জাগাইছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন ।।
চক্রে পিষ্ঠ আধারের বক্ষ-ফাটা তারার ক্রন্দন ।

ওগো বন্ধু,
সেই ধাবমান কাল
জড়ায়ে ধরিল মোরে ফেলি তার জাল ।।
তুলে নিল দ্রুতরথে
দুঃসাহসী ভ্রমনের পথে
তোমা হতে বহু দুরে ।

মনে হয় অজস্র মৃত্যুরে পারে হয়ে আসিলাম
আজি নবপ্রভাতের শিখরচূড়ায়;
রথের চঞ্চল বেগ হাওয়ায় উড়ায়
আমার পুরানো নাম ।

ফিরিবার পথ নাহি;
দূর হতে যদি দেখ চাহি
পারিবে না চিনিতে আমায় ।

হে বন্ধু, বিদায় ।

কোনোদিন কর্মহীন পূর্ণ অবকাশে
বসন্তবাতাসে
অতীতের তীর হতে যে রাত্রে বহিবে দীর্ঘশ্বাস,
ঝরা বকুলের কান্না বহিবে আকাশ,
সেইক্ষণে খুজে দেখো, কিছু মোর পিছে রহিল সে
তোমার প্রাণের প্রান্তে; বিস্মৃ্তিপ্রদোষে
হয়তো দিবে সে জ্যোতি,
হয়তো ধরিবে কভু নামহারা স্বপ্নের মুরতি ।

তবু সে তো স্বপ্ন নয়,
সবচেয়ে সত্য মোর, সেই মৃত্যুঞ্জয়।।
সে আমার প্রেম।
তারে আমি রাখিয়া এলেম
অপরিবর্তন অর্ঘ্য তোমার উদ্দেশে
পরিবর্তনের স্রোতে আমি যাই ভেসে
কালের যাত্রায়

হে বন্ধু, বিদায় ।

তোমার হয়নি কোনো ক্ষতি ।
মর্তের মৃত্তিকা মোর, তাই দিয়ে অমৃতমুরতি
যদি সৃষ্টি কোরে থাক, তাহারি আরতি
হোক তব সন্ধ্যাবেলা ।।

পূজার সে খেলা
ব্যাঘাত পাবেনা মোর প্রত্যহের স্নানস্পর্শ লেগে
তৃষ্ণার্ত আবেগবেগে
ভ্রষ্ট নাহি হবে তার কোনো ফুল নৈবেদ্যের থালে ।

তোমার মানস ভোজে সযত্নে সাজালে
যে ভাব্রসের পাত্র বানীর তৃষায়
তার সাথে দিবনা মিশায়ে
যা মোর ধুলির ধন, যা মোর চক্ষের জ্বলে ভিজে ।
আজও তুমি নিজে
হয়তো বা করিবে রচন
মোর স্মৃতিটুকু দিয়ে স্বপ্নাবিষ্ট তোমার বচন ।
ভার তার না রহিবে, না রহিবে দায় ।

হে বন্ধু, বিদায় ।

মোর লাগি করিও না শোক ।।
আমার রয়েছে কর্ম, আমার রয়েছে বিশ্বলোক ।
মোর পাত্র রিক্ত হয় নাই,
শূন্যেরে করিব পূর্ণ, এই ব্রত বহিব সদাই ।
উৎকণ্ঠ আমার লাগি কেহ যদি প্রতীক্ষিয়া থাকে
সেই ধন্য করিবে আমাকে ।

শুক্লপক্ষ হতে আনি
রজনীগন্ধার বৃন্তখানি
যে পারে সাজাতে
অর্ঘ্যথালা কৃষ্ণপক্ষ রাতে,
যে আমারে দেখিবারে পায়
অসীম ক্ষমায়
ভালোমন্দ মিলায়ে সকলি,
এবার পূজায় তারি আপনারে দিতে চাই বলি ।

তোমারে যা দিয়েছিনু তার
পেয়েছ নিঃশেষ অধিকার ।
হেথা মোর তিলে তিলে দান,
করুন মুহুর্তগুলি গন্ডুষ ভরিয়া করে পান
হৃদয় অঞ্জলি হতে মম ।
ওগো তুমি নিরুপম,
হে ঐশ্বর্যবান,
তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারি দান;
গ্রহন করেছ যত ঋনী তত করেছ আমায় ।

হে বন্ধু, বিদায় ।।