বাদল-রাতের পাখি
--কাজী নজরুল ইসলাম
বাদল-রাতের পাখি!
কবে পোহায়েছে বাদলের রাতি, তবে কেন থাকি’ থাকি’
কাঁদিছ আজিও “বউ কথা কও” শেফালির বনে একা,
শাওনে যাহারে পেলেনা, তা’রে কি ভাদরে পাইবে দেখা? ...
তুমি কাঁদিয়াছ “বউ কথা কও” সে-কাঁদনে তব সাথে
ভাঙিয়া পড়েছে আকাশের মেঘ গহীন শাওন-রাতে।
বন্ধু, বরষ-রাতি
কেঁদেছে যে সাথে সে ছিলো কেবল বর্ষা-রাতেরই সাথি!
আকাশের জল-ভারাতুর আঁখি আজি হাসি-উজ্জ্বল;
তেরছ-চাহনি যাদু হানে আজ, ভাবে তনু ঢল ঢল!
কমল-দীঘিতে কমল-মুখীরা অধরে হিঙুল মাখে,
আলু থালু বেশ-- ভ্রমরে সোহাগে পূর্ণ-আঁচলে ঢাকে।
শিউলি-তলায় কুড়াইতে ফুল আজিকে কিশরী মেয়ে
অকারণ লাজে চমকিয়া ওঠে আপনার পানে চেয়ে।
শালিকের কুঁড়ি গুঁজিছে খোঁপায় আবেশে বিধুরা বধূ,
মুকুলি’ পুষ্প-কুমারীর ঠোঁটে ভরে পুষ্পল মধু।
আজি আনন্দ-দিনে
পাবে কি বন্ধু বধুরে তোমার, হাসি দেখে লবে চিনে?
সরসীর তীরে আম্রের বনে আজো যবে ওঠ ডাকি’
বাতায়নে কেহ বলে কি, “কে তুমি বাদল-রাতের পাখি”!
আজো বিনিদ্র জাগে কি সে রাতি তার বন্ধুর লাগি’?
যদি সে ঘুমায়—তব গান শুনি “চকিতে ওঠে কি জাগি”?
ভীন-দেশি পাখি! আজিও স্বপন ভাঙিল না হায় তব,
তাহার আকাশে আজ মেঘ নাই—উঠিয়াছে চাঁদ নব?
ভ’রেছে শূন্য উপবন তার আজি নব নব ফুলে,
সেকি ফিরে চায় বাজিতেছে হায় বাঁশি যার নদীকুলে?
বাদল-রাতের পাখি!
উড়ে চল—যথা আজো ঝরে জল, নাহি ক’ ফুলের ফাঁকি!