|| বাংলার নবাবের ওয়েবসাইটে স্বাগতম ||
আমি রুষে উঠে যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া | ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া।

রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০১১

ভিকারুন্নেসার ঘটনা ও মিডিয়ার এসিড টেস্ট।

ভিকারুন্নেসা'র ঘটনা নতুন করে তুলে ধরার প্রয়োজন নেই। বরং এ সম্পর্কে জানেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। দেশের প্রতিটি মানুষই ঘৃণা আর ধিক্কার প্রকাশ করছে। ক্ষোভে ফেটে পড়েছে পুরো দেশবাসী। এমন ঘৃণ্য অপরাধীর শাস্তি কাম্য আপামর জনতার।

তবে ভিকারুন্নেসার এই সাম্প্রতিক ঘটনাটি আমাদের বিবেকের এসিড-টেষ্টের মত হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরো দেশবাসী যখন অপরাধীর সাজা দেওয়ার দাবী জানাচ্ছে, তখন কিছু কিছু মিডিয়া আর কতিপয় সুশীল ব্যক্তির অপরাধীর পক্ষ নেওয়ার ঘটনা দেশবাসীকে হতবাক করেছে, করেছে বাকরুদ্ধ। ভিকারুন্নেসার এই ঘটনা মুখোশ খুলে দিয়েছে সুশীল নামধারী, মানবতার ধ্বজাধারী এই সকল ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের। কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আবার কেউবা চুপ থেকে মুলতঃ অপরাধীর পক্ষাবলম্বন করছেন।

অপরাধী নিজে যখন অপরাধ স্বীকার করেছেন, তখন সেটাকে অন্যকোন রুপ দিতে চেষ্টা করা প্রতারণারই নামান্তর। অপরাধ করলে অপরাধীর সাজা পেতে হবে এটাই স্বাভাবিক। আবার যখন অপরাধীকে সাজা না দিয়ে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়, তখন আপামর জনতা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাবে এটাও স্বাভাবিক। কিন্তু সেই প্রতিবাদকে যখন ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখানো হয়, মিডিয়ার লোকগুলো যখন বলে "তোমাদের (ভিকারুন্নেসার ছাত্রীদের) খবর কিভাবে বাইরে প্রকাশ হয় দেখে নেবো", তখন সেটাকে অপরাধীর পক্ষাবলম্বন এবং লেজুড়বৃত্তি ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে? 

বিস্ময়কর সত্য হচ্ছে, যে সকল মিডিয়াকে এতদিন আমরা জনগনের বন্ধু ভেবে এসেছি, “বদলে যাও, বদলে দাও” অথবা “হৃদয়ে বাংলাদেশ” স্লোগান নিয়ে যারা আমাদের ভালোবাসার বুলি শুনিয়েছে, সেই সকল মিডিয়াই আজ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অপরাধীর অপরাধকে আড়ালে রেখে ভিকারুন্নেসার ছাত্রীদের আন্দোলনকে রাজনৈতিক ও উদ্দেশ্যমুলক বলে প্রকৃতার্থে অপরাধীর পক্ষেই সাফাই গাইছে। 

দেশের প্রথম সারির অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা “প্রথম আলো”। এই পত্রিকাটির গত কিছুদিনের খবর যারা নিয়মিত পড়েছেন, তার খুব ভালো করেই জানেন, পরিমলের অপরাধকে আড়াল করার হেন চেষ্টা নেই যা তারা করেনি। অবশেষে যখন জনরোষের মুখোমুখি চলে এলো এই পত্রিকাটি, তখন পরিমলের অপরাধকে হালকাভাবে তুলে ধরার জন্য একের পর এক মিথ্যা সংবাদ ছেপে চলেছে। সম্পাদীয়, উপসম্পাদকীয়তে ভিকারুন্নেসার ছাত্রীদের আন্দোলনকে 'কতিপয় বেয়াদব ছাত্রীর উচ্ছৃংখলতা' বলে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ভিকারুন্নেসার এক প্রক্তন ছাত্রীর লেখা এই নোটটি পড়লে আপনি বুঝতে পারবেন কতদূর গড়িয়েছে এই বর্ণচোরা পত্রিকাটির প্রতারণা।

চ্যানেল আই, “হৃদয়ে বাংলাদেশ” এই যাদের স্লোগান। অথচ এই স্লোগানটির আড়ালে কি নির্মম ফণাধারী রুপ লুকিয়ে রেখেছে চ্যানেলটি তা সহজে বোধগোম্য নয়। ভিকারুন্নেসার ঘটনাটি তাই এসিড টেষ্ট। মুখোশ খুলে দিয়েছে এই মুখোশধারী শয়তানদের। যারা শুধু চ্যানেল আই-এর প্রতিবেদনগুলো দেখে থাকেন, তাদের মনে হবে ঘটনার জন্য দায়ী ঐ ছাত্রী। পরিমল যেন ধোয়া তুলসি পাতা। আর ছোট্ট ছোট্ট এই ছাত্রীদের আন্দোলনকে তারা রাজনৈতিক প্রমান করে ছেড়েছে। 

মুন্নী সাহাকে আপনারা সবাই চেনেন। মিডিয়ার কল্যাণে সংবাদ জগতে এক পরিচিত মুখ। তিনি একজন নারী বলে অন্তুত, আরেকজন নারীর কথা তিনি বুঝবেন, তিনি বুঝবেন অত্যাচারের স্বীকার এক ছাত্রীর মনোবেদনা। কিন্তু তার করা মন্তব্যগুলো কি আপনি শুনেছেন? দেখেছেন কি তার প্রতিবেদনগুলো? অপরাধীকে বাঁচাতে আর ভিকি'র ছাত্রীদের আন্দোলনকে স্তিমিত করে দিতে এমন কোন ভাষা নেই যা তিনি প্রয়োগ করেননি। একজন নারী হয়ে আরেকজন নারীর বেদনা তাকে কি একটুও কাঁদায় না? নাকি সবকিছু আজ নষ্টদের দখলে? সবকিছুই কেবল পদলেহন করার জন্য! 

জন-অনুভুতিকে ভুলুন্ঠিত করে আমাদের বাকরুদ্ধ করেছে আরেকটি প্রথম সারির চ্যানেল “এনটিভি”। সময়ের সাথে, আগামীর পথে-- এই তাদের স্লোগান। বলতে পারেন অপরাধীর পক্ষাবলম্বন করে কোন্‌ আগামীর পথে আমাদেরকে এগিয়ে নিতে চায় এই চ্যানেলটি? পরিমল আর হোসনে আরার শাস্তির দাবীতে আন্দোলন করা কি অযৌক্তিক? অথচ, “তোমাদের খবর বাইরে প্রকাশ হয় কি করে?” এই দম্ভোক্তিটি করেছিলো এনটিভিরই এক সাংবাদিক। 

কার এই বাক্যটি যেন পড়েছিলাম- “শুধুমাত্র অপরাধীর অপরাধেই সমাজ ধ্বংশ হয় না, সমাজ ধ্বংশ হয় ভালো মানুষের নিরবতার কারণে”। মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে বলা হয় বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের প্রাণ। টীনেজার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রয়েছে তার আত্মার টান। তার সেই প্রাণ-প্রিয় ছাত্রীরাই আজ আন্দোলনে নেমেছে। প্রখর রোদ উপেক্ষা করে নবম-দশম শ্রেণীর কোমলমতি ছাত্রীরা তাদেরই এক সহপাঠিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে মিছিল করছে। সেই অত্যাচারিত ছাত্রীটির জন্য, আন্দোলনরত এই সকল ছাত্রীদের জন্য জাফর ইকবাল সাহেবের কি একটুও প্রাণ কাঁদেনা? কলম থেকে একটা বাক্যও কি বের হয় না? নাকি পরিমল নামক এই আস্তাকুড়ের কীটের বিরুদ্ধে কলম ধরলে উনার প্রভুমহল বিশেষ অসন্তুষ্ট হবেন? তাহলে পরিমলের জন্মস্থান, তার রাজনৈতিক সংযুক্তির কাছে কি জাফর ইকবাল সাহেবের সকল নীতিবোধ অসহায় হয়ে পড়লো! 

তবে সত্যের আলো ক্ষীন হলেও জ্বলে। তাকে নেভানো যায়না। এই অন্যায়ের বিপক্ষে রয়েছে এদেশের সকল স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। রয়েছে 'সমকাল' ও 'আমার দেশে'র মত মিডিয়া। যারা বিগত কিছু দিনের এই পত্রিকা দুটি দেখেছেন, তারা জানেন এই দুটি পত্রিকাই অন্যায়ের সাথে আপোসহীন থেকেছে। উপরওয়ালাদের তীব্র ভ্রুকুটি উপেক্ষা করেও সত্য সংবাদ তুলে ধরার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ধন্যবাদ আমার দেশ, ধন্যবাদ সমকাল। এছাড়াও রয়েছে দেশের অসংখ্য ব্লগার ও ফেইসবুকার। ব্লগ বা নোটের মাধ্যমে তারা এই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ছাত্রী বোনদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ভিকারুন্নেসার সকল ছাত্রী-বোনদের বলছি, তোমাদের আন্দোলন স্তিমিত হবার নয়, পরিমল ও হোসনে আরাকে সাজা পেতেই হবে। এদেশের প্রতিটি বিবেকবান মানুষ তোমাদের পাশে রয়েছে।