সাম্প্রতিক ঘটনাবলী ও বিক্ষিপ্ত ভাবনা।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন কতটা সফল হবে তা’ নিয়ে এই মুহুর্তে খুব শক্ত একটা অনুমান দাড় করাতে পারছিনা। ইতিমধ্যেই খুলনা’র বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে একাত্মতা ঘোষনা করেছে। দিন দিন এই আন্দোলন বেগবান হচ্ছে। অন্যায়ভাবে বহিস্কারাদেশ দেওয়ার প্রতিবাদে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত ও বাস্তবসম্মত।
কিছুদিন আগেও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিটিক্স নেই বলে খানিকটা গর্ববোধ করতাম। স্টুডেন্ট-পলিটিক্স নামক এই ভয়াল কালো থাবাটি গ্রাস করতে পারেনি বলেই হয়তো নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছি। সুদীর্ঘ চার বছরের ক্যাম্পাস লাইফে কখনো মারামারি হয়ে ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যায়নি বলে এক ধরণের আত্মতুষ্টিতে ভুগেছি। হঠাৎ করেই আগ্নেয়াস্ত্রের গোলাগুলিতে একজন ছাত্রের অকাল মৃত্যুতে কখনো শোক করতে হয়নি আমাদের। সম্পূর্ণ নির্ঝঞ্জাট চারটি বছরই (হ্যাঁ, চার বছরের একটি দিনও বেশি নয়) পার করেছি আমরা। কিন্তু কখনো কি ভেবেছি স্টুডেন্ট-পলিটিক্স নামক এই ভয়াল কালো থাবাটি না থাকার ফলে এর থেকেও বড় কালো থাবার মুখোমুখি হতে চলেছে আমাদেরই জুনিয়র কিছু ছাত্র-ছাত্রীরা?
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট-পলিটিক্স নেই; কিন্তু আছে টিচার-পলিটিক্স, টিচার’স এসোসিয়েশান। যেখানে স্টুডেন্ট-পলিটিক্স থাকেনা সেখানে কি করে টিচার-পলিটিক্স বিদ্যমান? এই টিচার-পলিটিক্স- এর কথায়ই বলছি। স্টুডেন্ট-পলিটিক্স থেকেও ভয়াল আর নোংরা এই টিচার-পলিটিক্স। এই টিচার-পলিটিক্স -এর কারণেই নিরপরাধ হয়েও বিভিন্ন মেয়াদের সাজা পেতে হলো যৌক্তিক দাবীতে আন্দোলন করা কিছু ছাত্র-ছাত্রীদের; কিছু কিছু ছাত্রের জীবন প্রদীপ একেবারেই নিভিয়ে দেওয়া হলো। আর এই মহান দায়িত্বটি পালন করেছেন আমাদের মহান দেশের জাতি গড়ার কারিগর মহান শিক্ষকেরা। শিক্ষকেরা নাকি জাতির বিবেক। তো, এই জাতির বিবেক শিক্ষকদের কি একটিবারের জন্যও বিবেক জাগ্রত হয়না?
ক্লাসমেটদের বাদ দিয়ে ক্লাসে যেতে রাজি নয় ছাত্র-ছাত্রীরা। তাই এখন তারা আন্দোলন করছে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের বহিষ্কারাদেশ বাতিলের দাবীতে; পালন করছে আমরণ অনশন কর্মসূচী। কিন্তু এতেও কি জাগ্রত হবে জাতির বিবেক এই মহান শিক্ষকদের বিবেক? হবে বলে তো মনে হয়না। আজ পঞ্চম দিন হতে চললো। কই, কোন শিক্ষকে তো এখনো দেখা গেলনা ছাত্র-ছাত্রীদের দাবীর সমর্থনে দু’টি কথা বলতে? উনারা কথা বলবেন কি করে? উনারা যে স্থানীয় পাতি নেতা সহ আওয়ামীনেতাদের সন্তুষ্ট করার জন্যই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী (শিক্ষাদানের মহান দায়িত্ব নয়) নিয়েছেন।
সবশেষে একটি ব্যাক্তিগত শ্লেষ দিয়েই লেখাটি শেষ করি। কারো জন্য গর্ত খুড়ে রাখলে সেই গর্তে নিজেকে পড়তে হয়—এ অনেক পুরোন কথা। কিন্তু বাস্তব সত্য হলো, তা সবসময় সত্য হয়েই দেখা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন নিজের ডিসিপ্লিনের একটি অনুষ্ঠান-সঞ্চালনার দায়িত্ব পেয়েছিলাম। ‘আ’ আদ্যক্ষরের একজন জুনিয়র ছাত্র ও তার ব্যাচের কিছু ছাত্র-ছাত্রী, আমাকে হেয় করার জন্য, সেই অনুষ্ঠানের পদে পদে বিপত্তি সৃষ্টি করার সবধরণের প্রচেষ্টাই চালিয়েছিলো। সব থেকে মজার ব্যাপার হলো, তারা কিছু দায়িত্ব নিয়ে তা’ সঠিকভাবে পালন করেনি কিন্তু তার দায়ভার চাপাতে চেয়েছিলো আমার উপর। আমার নামে মোটামুটি যত রকমের কুৎসা রটানো সম্ভব তা’ রটিয়েছিলো। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় ষড়যন্ত্রকারীদের সব প্রচেষ্টা ব্যার্থতায় পর্যবসিত হয়েছিলো। এর জন্য আমি স্মরণ করি অন্যান্য আরো কিছু জুনিয়র ছাত্র-ছাত্রীদের। যাইহোক, যাদের বোঝা দরকার, তারা কিন্তু ঠিকই আমার পরিশ্রমটা বুঝতে পেরেছিলো। আমি ঠিকই বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত চার বছরের একটি দিনও বেশি ব্যয় না করে বের হয়ে এসেছি। বের হতে পারেনি সেই ‘আ’ আদ্যক্ষরের ছাত্রটি এবং তার কিছু সাগরেদ। দুই বছরের বহিষ্কার যে বড়ই যন্ত্রনার! গর্তটা যে তার নিজেরই খোড়া!