|| বাংলার নবাবের ওয়েবসাইটে স্বাগতম ||
আমি রুষে উঠে যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া | ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া।

রবিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১০

এক গাঁয়ে

মাত্র কয়েকদিন আগেই কবিতা নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছলাম। সেখানে কবিতার রুপ ধরবার ব্যার্থ প্রয়াস চালানো হয়েছিলো। তবে, যে প্রকারেই কবিতার রুপ ধরবার চেষ্টা করা হোক না কেন, কবিতার প্রধানতম রুপ এই যে তা একটি কবিতা, তা একটি মনের আবেগঘন ভাবের বাহন। কবি সম্রাট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও কিছুটা এই দিকেই ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। ‘অন্তরকে টেনে বের করে আনতে পারলেই কবিতা লেখা সম্ভব’ এমন ধারণার বশবর্তী ছিলেন রবি ঠাকুর। যাইহোক, আজ রবিবাবুর একটি অসম্ভব সুন্দর কবিতা শেয়ার করছি। আশা করি ভালো লাগবে।

এক গাঁয়ে
----রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

আমরা দূজন একটি গাঁয়ে থাকি,
      সেই আমাদের একটিমাত্র সুখ।
তাদের গাছে গায় যে দোয়েল পাখি
      তাহার গানে আমার নাচে বুক।
তাহার দুটি পালন-করা ভেড়া।
       চড়ে বেড়ায় মোদের বটমূলে,
যদি ভাঙে আমার ক্ষেতের বেড়া
       কোলের ‘পরে নিই তাহারে তুলে।

                   আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা,
                   আমাদের এই নদীর নামটি অঞ্জনা,
                   আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচজনে,
                   আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা।।

দুইটি পাড়ায় বড়োই কাছাকাছি,
       মাঝে শুধু একটি মাঠের ফাঁক।
তাদের বনের অনেক মধুমাছি
       মোদের বনে বাঁধে মধুর চাক।।
তাদের ঘাটে পূজার জবামালা
      ভেসে আসে মোদের বাঁধা ঘাটে,
তাদের পাড়ার কুসুম-ফুলের ডালা
     বেচতে আসে মোদের পাড়ার হাটে।

                 আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা,
                 আমাদের এই নদীর নামটি অঞ্জনা,
                 আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচজনে,
                 আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা।।

আমাদের এই গ্রামের গলি- ‘পরে
      আমের বোলে ভরে আমার বন।
তাদের ক্ষেতে যখন তিসি ধরে
      মোদের ক্ষেতে তখন ফোটে শণ।
তাদের ছাদে যখন ওঠে তারা
       আমার ছাদে দখিন হাওয়া ছোটে
তাদের বনে ঝরে শ্রাবণ-ধারা,
       আমার বনে কদম ফুটে ওঠে।

                  আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা,
                  আমাদের এই নদীর নামটি অঞ্জনা,
                  আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচজনে,
                  আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা।।