|| বাংলার নবাবের ওয়েবসাইটে স্বাগতম ||
আমি রুষে উঠে যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া | ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া।

রবিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১১

ভয়ংকর মাছ পিরানহা—এক সামুদ্রিক দানব


Through The Brazillian Wilderness বইয়ে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্ট পিরানহা সম্পর্কে লিখেছেন--- “বিশ্বের সবচেয়ে হিংস্র মাছ হচ্ছে পিরানহা। সবচেয়ে ভয়ংকর মাছ- হাঙ্গর বা বারাকুডাস- সাধারানত তাদের চেয়ে আকৃতিতে ছোট প্রাণি আক্রমন করে, কিন্তু পিরানহার দল অভ্যাসগতভাবেই তাদের চেয়ে আকৃতিতে বড় প্রাণি আক্রমন করে। অসতর্কভাবে পানিতে ডুবিয়ে রাখা হাতের আঙ্গুল তারা মুহুর্তেই ছিনিয়ে নিতে পারে; তারা সাতারুদের কেটে ছিড়ে খেয়ে ফেলে। প্যারাগুয়ের প্রায় প্রতিটি নদীমাতৃক শহরে এমন লোক রয়েছে যাদেরকে এই পিরানহারা ছিড়ে নিয়েছে অল্প পরিমানে হলেও। কোন দূর্বল বা আঘাতপ্রাপ্ত মানুষ বা প্রাণিকে তারা একেবারে ছিড়ে খেয়ে ফেলবে মুহুর্তেই; কারণ পানির মধ্যে রক্তের উপস্থিতি তাদেরকে প্রায় পাগল করে দেয়। তারা আঘাতপ্রাপ্ত কোন পক্ষী বা প্রাণিকে একেবারে টুকরো টুকরো করে ফেলবে, অথবা মাছের কোন বড় লেজকে ছিড়ে ফেলবে; কিন্তু পিরানহারা হচ্ছে ছোট্ট শরীরওয়ালা ক্ষুদ্র মাছ যাদের রয়েছে বড় বড় দাঁতওয়ালা চোয়াল যা দিয়ে তারা খুব সহজেই যেকোন কিছু তাদের মুখের মধ্যে নিয়ে নিতে পারে। তাদের ব্লেডের মত ধারালো দাঁতগুলো হাঙ্গরের দাঁতের মত তীক্ষ্ণ আর তাদের চোয়ালের মাংশে রয়েছে অপরিসীম শক্তি। উম্মত্ত, ক্রোধান্বিত হলে এই মাছগুলো তাদের দাঁতগুলো পরম গতিতে মাংশ ও হাড়ের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিতে পারে। ছোট্ট জালিসম্বলিত মাথা, তীক্ষ্ণ ভয়ংকর রক্ত চোখ আর নিষ্ঠুর শক্তিশালী চোয়াল নিয়ে এই মাছগুলো যেন দানবীয় শক্তির প্রতিরুপ। তীক্ষ্ণ ভয়ংকর চোখের মতই ধূর্ত এর গতি। এমন শক্তিশালী, হিংস্র, ক্রোধান্বিত প্রদর্শণী আমি পিরানহা ছাড়া আর কারো মাঝে দেখিনি।

মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই কিভাবে পিরানহারা একটি মানব শরীর বা গরু ছিড়ে খেয়ে ফেলতে পারে তা নিয়ে অসংখ্য মিথ বা গল্প প্রচলিত রয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রচলিত মিথ হচ্ছে, রক্তের ঘ্রাণ তাদেরকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করে আর তারা প্রচন্ডভাবে মাংশাসী মাছ। ‘পিরানহা ক্যাটল’ নামে সর্বাধিক প্রচলিত ব্রাজিলিয়ান মিথটি বলছে, পিরানহারা খুব ক্ষিপ্র গতিতে ছুটে গিয়ে পানিতে নামা প্রথম গরুটাকে আক্রমন করে দলের অন্যান্য পিরানহাদের ছুটে আসতে আহবান জানায়। যদিও পরবর্তীতে Biology Letters নামক বইতে দুইজন বিজ্ঞানী- হেলডার কোয়েরজ ও আনা মাগুরয়ান—এই তথ্য ভুল প্রমান করেন। এতদসত্বেও সারিনামে পরিচালিত একটি গবেষনায় দেখা যায় যে, পিরানাহা মানুষও আক্রমন করতে পারে, বিশেষ করে পানির লেভেল যখন অনেক নীচে নেমে যায়। হিংস্র লুন্ঠনকারী হিসেবে এদের খ্যাতি রয়েছে। ঝাকে ঝাকে এরা শিকারের পিছনে ছোটে আর দলবদ্ধভাবে আক্রমন করে বলেই এদের থেকেও বিশালকায় শিকার এদের হাত থেকে রক্ষা পায়না।

ধারালো দাঁত আর মাংশের প্রতি তীব্র আকর্ষনের জন্য এই মাছ সমধিক পরিচিত। দক্ষিন আমেরিকাতে এদের সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। ভেনিজুয়েলাতেও প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায় এই মাছ। সেখানে অবশ্য স্থানীয়ভাবে এদেরকে caribes নামে ডাকা হয়। বাংলাদেশের কাপ্তাই লেকেও কিছু পিরানহার সন্ধান পাওয়া যায়। ঠিক কত সংখ্যক প্রজাতির পিরানহা রয়েছে তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়না। তবে ধারণা করা হয় যে এদের প্রজাতির সংখ্যা হচ্ছে ৩০ থেকে ৬০।

গড়ে ১৪ থেকে ২৬ সেমি লম্বা হয় একটি পিরানহা। তবে সর্বোচ্চ ৪৩ সেমি লম্বা পিরানহাও দেখা গিয়েছে বলে বলা হয়। সব ধরণের পিরানহারই উভয় চোয়ালে এক সারি করে ধারালো দাঁত রয়েছে। দাঁতগুলো সারিবদ্ধভাবে সাজান। প্রতিটা দাঁতই ত্রিমাত্রিক কিন্তু নিম্নের পাশটি ব্লেডের চেয়েও তীক্ষ্ণ আর ধারালো।

মানুষের অর্থনৈতিক জীবনেও ভুমিকা রয়েছে পিরানহার। বিভিন্ন ছোট্ট ছোট্ট যন্ত্রপাতি আর অস্ত্র তৈরিতে ব্যাবহৃত হয় এদের দাঁত। একুরিয়াম মাছ হিসেবে পিরানহার ব্যাবহার রয়েছে। খাদ্য হিসেবে বেশ জনপ্রিয় এই পিরানহা। ট্যুরিষ্টদের সুভেনির হিসেবেও শুকনো পিরানহাদের ব্যাবহার দেখা যায়।

নানা বৈচিত্র সম্বলিত এই পিরানহাদের উপর দৃষ্টি পড়েছে হলিউড পরিচালকদেরও। James Bond সিরিজের You Only Live Twice ফিল্মে হাড়-সংযুক্ত মাংশ খেতে দেখা যায় এই পিরানহাকে। পরবর্তীতে পানির মধ্য থেকে শুধু এক টুকরো হাড়ই উত্তোলন করা হয়।১৯৭৮ সালে ‘পিরানহা’ নামে পিরানহাদের হিংস্রতা দেখিয়ে তৈরি করা একটি হলিউডি চলচ্চিত্র। ১৯৮১ ও ২০১০ সালে নির্মান করা হয় যথাক্রমে পিরানহার সিকুয়েল ও রি-মেক।