|| বাংলার নবাবের ওয়েবসাইটে স্বাগতম ||
আমি রুষে উঠে যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া | ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া।

মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১১

ঝরে গেলো আরও একটি সম্ভাবনাময় তাজা প্রাণ

জ সকালেও যখন ক্লাসের জন্য বের হচ্ছিলো, হয়তো মাকে বলে এসেছিলো দুপুরে আসবে বলে। হয়তো বলে এসেছিলো, দুপুরে মায়ের হাতের রান্না খাবে বলে। কিন্তু তার সেই ফিরে আসা, মায়ের হাতের রান্না খাওয়া আর হলো না। আর কোনদিন ফিরে আসবে না, কোনদিন মায়ের হাতের রান্না খাওয়া হবে না তার। সে যে আজ সেই জগতের বাসিন্দা, যে জগত থেকে ফিরে আসা যায়না। বাব মা অনেক স্বপ্ন হয়তো দেখেছিলেন, ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, পড়াশুনা শেষে দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করবে, তাঁদের মুখ উজ্জল করবে। তাদের স্বপ্ন আর পুরণ হলোনা। মা হয়তো সারা জীবন ছেলের পথ চেয়ে বসে থাকবে। তাঁর নাড়ী-ছেড়া ধন যে আসতে চেয়েছিলো! সেই মাকে কে সান্ত্বনা দেবে? 

আজ দুপুরে যখন ক্লাস থেকে হই হুল্লোড় করতে করতে বের হচ্ছিলো হাদি (পুরো নামটা এখনো জানতে পারিনি), তখনও কি জানতো আরেকটু পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসই কেড়ে নেবে তার জীবন? একবারও কি ও ভেবেছিলো আর তার বাসায় ফিরে যাওয়া হবেনা, খাওয়া হবেনা মায়ের হাতের রান্না? 

সবেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলো হাদি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফউটে ডিসিপ্লিনের প্রথম বর্ষের ছাত্র সে। আজ দুপুরে বাড়ি ফেরার সময় ক্যাম্পাসের মধ্যেই বাসে উঠতে গিয়ে চালক হঠাৎ বাস চালানোয় পড়ে যায় সে। সাথে সাথেই বাসের নীচে চাপা পড়ে প্রাণ দিতে হয় হাদিকে। মুহুর্তেই অপার সম্ভাবনার এই মেধাবী ছাত্রটি এ পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেয়। বাসচালকের হঠকারিতায় ঝরে গেলো আরও একটি তাজা প্রাণ। মাত্র কয়েক সেকেন্ড পরে বাস ছাড়লে হয়তো বেঁচে যেতে পারতো অমন অমিত সম্ভাবনার ছাত্রটি। 

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চালক আর হেল্পারেরা বরাবরই হঠকারী। আমি নিজেও একবার এর শিকার হয়েছি। সেবারে অল্পের জন্যহ বেঁচে যাই। নগরীর পাওয়ার হাউস মোড় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়-বাস দেখে উঠতে গেলে, এখান থেকে বাসে ওঠা যাবে না বলে ধাক্কা দেয় বাসের হেল্পার। রাস্তার শক্ত পীচের উপর পড়ে যাই আমি। এরা এত বেয়াদব আর অবডুরেট যে, দ্রুত গাড়ি চালিয়ে স্থান ত্যাগ করে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি ছাত্রেরই অভিযোগ রয়েছে এই বেয়াদবগুলোর বিরুদ্ধে। এরা এত বেশি বেখেয়াল যে, ছোট-খাট দূর্ঘটনা প্রতিনিয়ত লেগেই আছে। ওই বেয়াদবটা কি জানে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্যই কতটা কাঠ-খড় পোড়াতে হয় প্রতিটি ছাত্রকে? বাবা-মায়ের কত পরিশ্রমের ফলে একটি মেধাবী মুখ ভর্তি হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ে? 

যে বাবা আজ তার সন্তান হারিয়েছে, তার বুকের ব্যাথা লেখার ভাষা আমার নেই। যে মায়ের কোল খালি হয়েছে, তার হৃদয়ের হাহাকার বাঙময় করার শব্দ আমার নেই। শুধু জানি, ঘাতককে শাস্তি দিতে হবে। সবচেয়ে নিষ্ঠুর শাস্তি। সর্বোচ্চ শাস্তি, যেন আর কোন চালক এমন হঠকারী না হতে পারে। যেন আর কোন হাদিকে এবারে বেঘোরে প্রাণ দিতে না হয়।