|| বাংলার নবাবের ওয়েবসাইটে স্বাগতম ||
আমি রুষে উঠে যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া | ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া।

বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৬

গল্প নয়, সত্যি!

মানুষের জীবনে কিছু দিন থাকে, যা ভোলা যায় না। আজ থেকে ঠিক দু বছর আগে এমন একটা দিন এসেছিলো। ২৭ অক্টোবর, ২০১১। জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটিতে ভাইভা। ঠিক আগের রাত্রে ন' টার এ. কে. ট্রাভেলস এর বাসে করে খুলনা থেকে রওনা দিলাম আমরা। বাবা, মা আর আমি। শুরুতে গাড়ি বেশ ভালোই চলছিলো। রাত ১ টার দিকে বাস থামলো। সেই যে থামলো আর তার চলার নাম নেই। এক পা দু' পা করে সামনে এগোয়। আমার তো সকাল ১০ টা থেকে ভাইভা। বিশাল টেনশানে পড়ে গেলাম। বাবা সামনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখলেন সময় মতো সাভার পৌঁছানোর সম্ভাবনা খুব ই কম। দু একজন নেমে পড়লো মাঝ পথে, যাদের বুকে পাটা ছিল এবং খুব বেশি তাড়া ছিল। তখন বাস ধর্ম ঘট। আমরা সে সবের কিছুই জানতাম না। খুলনার এ. কে. ট্রাভেলস এর কন্ট্রাক্টর ও কিছু বলেনি আমাদের। আমাদের সাথে আরেকটি ছেলেও যাচ্ছিলো জাহাঙ্গীর নগরে ভাইভা দিতে।

কখন ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই। সকালে চোখ মেলে দেখি বাসের অধিকাংশ যাত্রীই বাসের ভিতর নেই। সব বাইরে। জ্যাম এ আটকা পড়া বিশাল লাইন দেখছে। আমিও নামলাম। তখনো আমরা পদ্মা নদীর এপারে । ঠিক কোথায় তাও জানি না। এক পর্যায়ে বাবা সব জিনিস পত্র নিয়ে এগোতে বললেন। আমরা বাস থেকে নেমে পড়লাম। একটু পর খেয়াল করে দেখি কোনও alternative নেই। বড্ডও ভুল হয়ে গেছে। ততক্ষণে বাস ছেড়ে দিয়েছে। আমরা আবার দ্রুত বাস ধরলাম। ড্রাইভার বিটকেলে একটা হাসি দিলো। বাবা রেগে গেলেন। এক ধরনের ছোট খাটো ঝগড়া বলা চলে। গাড়ি চালাতে উনার এতো গড়িমসি কেন? পিছনের গাড়ি গুলো কত দূর এগিয়ে গেছে। বড় কথা তাঁর মেয়ের পরীক্ষা। হাতে মাত্র তিন ঘণ্টা। ফেরি পেতে হবে। ওখানে দেরি হবে ঘণ্টা দুএক। আরও তখন হাল্কা হাল্কা শীত। আমরা সবাই দোয়া ইউনুছ পড়তে লাগলাম। অবশেষে ফেরি পার হওয়া গেলো।

ন' টা ৫৫ বাজে। কেবল সাভার পৌঁছেছে বাস। আর মাত্র ৫ মিনিট বাকি। সব বাস যাত্রীর দৃষ্টি তখন আমাদের দিকে। দু দুটো পরীক্ষার্থী এই বাসে। কেউ বলছে, '' আপনারা তো ভারি বেআক্কেল। এতো রিস্ক নিয়ে কেউ পরীক্ষা দিতে আসে? তাও আবার ঢাকায়!'' কেউ বলছে '' আল্লাহ খোদার নাম নেন।'' ''মাঝ রাত্রে না নেমে ভুল করেছেন।'' কেউ কেউ বলছেন ''ভাই একটু দ্রুত চালান। বাচ্চা দুটোর পরীক্ষা।'' এ যেন ঠিক ''এক বলে এক রান'' এর মতো পরিস্থিতি। বাসের সবাই দর্শক। আমরা খেলোয়াড় দল। এখন খেলছেন ড্রাইভার ভদ্রলোক। তাঁর উপর নির্ভর করছে গোটা দল। জীবনের বাজি রেখে তিনি বাস চালাচ্ছেন। হঠাৎ মনে হলো মানুষের জন্য এক সাথে এতো গুলো মানুষের এতো উচ্ছ্বাস, উদ্বেগ, ভালবাসা সরাসরি কখনো দেখিনি এর আগে।

ঠিক ১০ টা ১ মিনিটে জাহাঙ্গীরনগরের সামনে থামলো বাস। বাসের হেল্পার বিজয়ীর হাসি হেসে বললেন ''কি ঠিক বলেছিলাম আপনারা চিন্তা করবেন না, সময় মতো পৌঁছে দেবো?'' আমরা এক গাল হেসে দিলাম।

আমি হাসছি, আমরা হাসছি, পুরো এক বাস ভর্তি যাত্রী হাসছে।

(কপিরাইট: নীলিমা নূর)