|| বাংলার নবাবের ওয়েবসাইটে স্বাগতম ||
আমি রুষে উঠে যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া | ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া।

বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

অণুগল্প

নাম্বারটা পেয়েছিলাম তার এক বান্ধবীর কাছে। বান্ধবীর ক্যামেরায় তার ছবি দেখে ভালো লেগেছিলো তাকে। কিন্তু তার সাথে যোগাযোগের কোন উপায় ছিলনা। পরে কৌশলে সেই বান্ধবীর কাছ থেকে নিয়েছিলাম তার নাম্বার। তারপর কয়েকটা দিন পার হলেও তাকে আর কল করা হয়নি। বিষয়টা নিয়ে আমিও খুব একটা মাথা ঘামায়নি। প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম তাকে কল করার কথা।

কয়েকদিন পর হঠাৎ মোবাইলের কন্ট্যাক্টস-এর মধ্য দিয়ে স্ক্রল করার সময় পর্দায় তার নাম্বার ভেসে ওঠে। ভাবলাম একটা কল দেই। দেখা যাক কী হয়। কিছুক্ষণ রিং বাজার পর ওপাশ থেকে ভেসে আসলো তার কন্ঠস্বর।

--আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন?
--সামিয়া বলছেন?
--হুম। আপনি?
--আমাকে আপনি চিনবেন না। আপনার পরীক্ষা কেমন হলো?

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় এডমিশান টেষ্টের দুদিন পরে আমি তাকে ফোন করি। আর, সে যে এডমিশান টেষ্ট দিয়েছিলো সে খবর আমি তার বান্ধবীর কাছ থেকে জেনেছিলাম। এবার ওর অবাক হওয়ার পালা।
--আরে, আপনি দেখছি আমার অনেক কিছুই জানেন! আমার নাম, এডমিশান টেষ্টের খবর।
--হুম জানি বটে।
--আর কি কি জানেন বলেন  তো?
--এই যে এখন আপনি পড়ছেন।
--এটা তো খুব স্বাভাবিক কথা। যেহেতু আমার আরও কয়েকটা পরীক্ষা বাকী তাই আমি এখন পড়াশুনা করবো এটা তো স্বাভাবিক। যাইহোক, আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথায়? আপনি আমাকে চেনেনই বা কেমন করে? আমি যে এডমিশান টেষ্ট দিচ্ছি সে খবরই বা আপনি কোথায় পেলেন?

শেষের দিকে অনেক গুলো প্রশ্ন একসাথে করে সামিয়া। কোনটার উত্তর করবো বুঝতে না পেরে আমিও চুপ থাকি অনেক্ষন। তারপর এগিয়ে চলে আমাদের কথা। বুঝতে পেরেছিলাম, কৌতুহলী না করতে পারলে ওর সাথে কথা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়তো। প্রথম দিনের কথার সূত্র ধরে এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই টুকটাক কথা হতো ওর সাথে।

শুরু থেকেই ওর প্রতি আমার একটা ফ্যাসিনেশান ছিলো। ছবিতে দেখা শুভ্র চেহারার এই মেয়েটির কথাও যে এত সুন্দর তা ওর কন্ঠস্বর না শুনলে বুঝতে পারতাম না। দিন যেতে থাকলো আর ওর প্রতি ফ্যাসিনেশান আমার বেড়েই চললো। নূপুরের নিক্কণ ধ্বনির মত রিন রিন করে বাজতো ওর কন্ঠ। শোনার জন্য মুখিয়ে থাকতাম নিয়মিত। আমার ব্যাস্ত সময়ের মাঝে ওর জন্য বের করা সময় একটু একটু করে বৃদ্ধি পেতে লাগলো। আমি সরাসরি কল করতে পারতাম না ওকে। কখন ও কল করবে সেই আশায় বসে থাকতাম। ওর কল আসতে যদি খুব দেরী হতো, মনে মাঝে অভিমানের মেঘ জমা হতো। কিন্তু যখনই ফোনের মধ্য দিয়ে কানে এসে ওর সুর বাজতো, মুহুর্তেই ঝড়ো বাতাসে উড়ে যেতো অভিমানের মেঘ। সন্ধ্যাগুলো ছিলো অদ্ভুত। সাধারনতঃ সন্ধ্যাবেলাতে আমি বেশ একটু ফ্রী থাকতাম। আর সারাদিনের কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে শুরু হতো আমাদের ফোনালাপ। দীর্ঘ সময় ধরে চলতো। চলতো বাড়ি ফেরার পরেও, এমনকি ফ্রেশ হওয়ার জন্যও সময় থাকতো না।

প্রস্তুত থাকতাম তার সাথে কথা বলার জন্য। কখন না জানি তার ফোন আসে! আপনি থেকে তুমি, খোজ থেকে কেয়ার, রাগ থেকে অনুরাগ এসব ইথারে ভেসেই হয়েছিলো। কিন্তু আমি তাকে দেখলেও সে আমাকে দেখেনি। আমিও যতটুকু দেখেছিলাম সেও কেবল ঐ ছবিতে। দেখা করার জন্য উতলা হই দুজনেই। ডীষ্টান্স অনেকটা বেশি ছিলো। দিনক্ষণ তবুও ঠিক হলো, দেখা হলো আমার মানসীকে। চোখের সামনে জলজ্যান্ত মানুষটিকে বিশ্বাস করতে আমার কষ্ট হচ্ছিল। এই পরী-টাইপ মেয়েটার সাথে আমি এতদিন কথা বলেছি! ছবির থেকেও সাদামাটা। ভাবনার থেকেও মোহনীয়

ঐদিনটা ছিলো আমার সাথে ওর শেষ দিন। আমার সাথে কথা বলার মাঝেই পারিবারিকভাবে ঠিক হয় ওর বিয়ে। অদেখা এই আমাকে নিয়ে কোন সিদ্ধান্তে আসতে না পেরে অবশেষে বিয়েতে মত দিয়েছিলো, জানিয়েছিলো ও।