|| বাংলার নবাবের ওয়েবসাইটে স্বাগতম ||
আমি রুষে উঠে যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া | ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া।

রবিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১২

উত্তাল এই দিনগুলি


দিনগুলি খুব উত্তাল যাচ্ছে। সারাদেশ ক্ষোভে আর প্রতিবাদে ফেটে পড়ছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক একজন বাংলাদেশীকে অমানবিক অত্যাচারের প্রতিবাদের উত্তাল সারাদেশ। হঠাৎ হঠাৎ ক্ষোভে ফেটে পড়ার ঘটনা বাংলাদেশীদের জন্য এখন প্রায় নিয়মিত। কয়েকদিন পরপরই সীমান্তে একটা লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে আর ক্ষোভে ফেটে পড়ে এদেশের আপামর জনতা। মিছিল মিটিং থেকে শুরু করে ব্লগ ফেইসবুক সবজায়গাতে এর উত্তাপ ছড়াতে থাকে। দিন যায় আর চাপা পড়তে থাকে এই ক্ষোভ। সময়ের আবর্তনে দগদগে ঘা শুকিয়ে নিঃশেষ হয়ে আসে। কয়েকদিন পর আবারো আরেকটা ক্ষতের সৃষ্টি হয়। আবারো উত্তাল হয় সারাদেশ। আবারো ঠান্ডা হয়ে আসে পরিস্থিত। এই হচ্ছে এদেশের মানুষের নৈমত্তিক ঘটনা।


গনতান্ত্রিক সরকার ব্যাবস্থায় এটা বেশ দারুণ একটা ধারণা বলে আমার মনে হয়। পাঁচ বছরের জন্য জনগন তাদের ভাগ্যকে ছেড়ে দেয় কিছু অশিক্ষিত (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাই হয়; অন্তত আমাদের দেশে) গোয়াড়গোবিন্দদের হাতে। তারপর এই পাঁচ বছরে অন্তত আর কথা বলার সুযোগ থাকে না তাদের। এই পাঁচ বছরের জন্য হলেও জনগনের ভাগ্য-নিয়ন্তা বনে যান এই সকল গোয়াড়গোবিন্দরা। তারপর থেকে তাদের মর্জিমাফিক চালাতে থাকে দেশটাকে। 
দুটি বিষয় কোন অবস্থাতেই আমার মাথায় আসে না। এক, ক্ষমতায় আরোহনের পর এই নেতা-নেত্রীরা পাবলিক পালস্‌ বুঝতে পারে না কেন? দুই, একই পরিণতি জেনেও জনগন কেন সেই সকল গোয়াড়গোবিন্দদের আবার নির্বাচিত করে?

কয়েকদিন আগে আমার এক বন্ধু ফেইসবুকে স্টাটাস দিয়েছিলো অনেকটা এই রকমঃ “আরব বসন্তের মত আমাদের দেশেও একটা বিপ্লব দরকার। কনভেনশনাল ধারণা মোতাবেক কোন একজন নেতা এসে দেশকে রক্ষা করবেন; এটা এখন অচল। যা করার তরুণদেরকে সম্মিলিতভাবেই করতে হবে’। আমার বন্ধুটি আরও আক্ষেপ করেছিলো, বর্তমান সময়ের শিক্ষিত সচেতন তরুণেরা চুপ আছে কেন?

বন্ধুটির ওই স্টাটাসের মন্তব্যে আমি একটা ছোট্ট গল্প বলেছিলাম। আজও গল্পটি বলবোঃ একবার এক দেশের প্রতাপশালী এক রাজা চেয়েছিলো সেদেশের জনগন যেন তার (রাজার) পূজা করে; তারই উপাসনায় মত্ত থাকে। তো উজিরের বুদ্ধি মতে তিনি এক কাজ করলেন। কঠোর আদেশ দেয়ার পরিবর্তে তিনি তাদের অশিক্ষিত করার পরিকল্পনা হাতে নিলেন। ‘হীরক রাজার দেশে’ সিনেমার মত তিনি প্রচার করলেনঃ ‘জানার কোন শেষ নেই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই’। আর এক এক করে বন্ধ করে দিলেন রাজ্যের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। 

রাজা সফল হলেন। রাজ্যের সকল জনগন এক সময় গন্ড মূর্খে পরিণত হলো। তারা এতটায় মুর্খ হলো যে, গাছের শাখায় বসে সেই শাখাতেই তারা কুঠার চালাতো। অথচ, তাদের এতটুকু হুঁশ ছিলোনা যে; শাখার সাথে সাথে তারা নিজেরাও মাটিতে পতিত হবে। তারপর থেকে রাজার মর্জিমাফিক তারা কেবল রাজারই উপাসনা করতে লাগলো আর রাজাকেই তাদের সৃষ্ঠিকর্তা মেনে নিল। 

গনতান্ত্রিক ব্যাবস্থা মুলত একটি শিক্ষিত সমাজের ব্যাবস্থা যেখানে দেশের প্রতিটি নাগরিক তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। যেদেশের আমজনতা অধিকার কি তাই জানেনা, দু-মুঠো খাবার আর একটু মাথা গোঁজার ঠাই পেলে যে দেশের জনগন ডানে-বাঁয়ে তাকায় না, সরকার কি, তাদের কাজ কি এটা যে দেশের জনগন জানেনা; সেই দেশের জন্য গনতন্ত্র কতটা যথার্থ সেটা ভেবে দেখার সময় এসেছে বৈকি।