সুন্দরবন যে কত সুন্দর তা গল্প বা ভ্রমন কাহিনী
পড়ে আপনি কখনো বুঝতে পারবেননা।
আমার প্রথম সুন্দরবন ভ্রমন একটু ভিন্ন প্রকৃতির। চাকরির সুবাদের বড় ভাইয়ের পোষ্টিং তখন কয়রাতে। একদিন ফোন করে বললেন, “এখান থেকে একেবারেই কাছে সুন্দরবন। আয়, দেখে যেতে পারবি”। আমি তখন ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র। তিন চারদিন সময় হাতে নিয়ে চলে গেলাম কয়রা। বড় ভাইয়ের বাসা হতে মাত্র এক কিলো. দূরে সুন্দরবন। একটা বাই-সাইকেল নিয়ে আমি রওনা হলাম সুন্দরবন দেখতে। রাস্তাটা যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে, একটা নদীর কিনারে। সাইকেলটা পাশে রেখে আমি কেবল মাথা উঁচু করে সামনের দিকে তাকিয়েছি। বিস্ময়ে বিমুঢ় হয়ে গেলাম। সুন্দরবন এত্ত সুন্দর! আকাশে তখন ঝলমলে রোদ। সম্পূর্ণ পরিষ্কার নীলাকাশ। দিগন্ত রেখারের উপরে নীলের সাগর আর নীচে আলোয় ঝলমল সবুজের সমাহার। নদীর ওপার যে সুন্দরবন তা বোঝার জন্য কারো কাছ থেকে আপনার শুনে নিতে হবেনা। এপাশের গাছগুলো চিরচেনা, আমার প্রতিদিনের দেখা। কিন্তু ওপাশের গাছগুলো? এক্কেবারেই আলাদা। মনে হয় সেই বিশাল গাছগুলো সগৌরবে মাথা উঁচু করে জানান দিচ্ছে, “এইটা সুন্দরী সুন্দরবন। এইটা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সুন্দরবন, এখানটার সবকিছুই রয়্যাল”।
তারপর অনেকদিন কেটে যায়। প্রচন্ড একটা ঝড়ের খবর শুনছিলাম
রেডিওতে। কিন্তু সেটা যে সিডরের মত এমন ভয়াবহ হবে তখনও বুঝতে পারিনি। বিকাল হতেই
দমকা হাওয়া বইতে লাগলো। সন্ধ্যা যতই ঘনিয়ে আসলো, বাতাসও তত উম্মত্ত হতে থাকলো। রাত
বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকলো বাতাসের বেগ। উদ্বেগ উৎকন্ঠায় সারারাপ প্রায় ঘুমই
হলোনা। এক অজানায় আশংকায় পার করলাম সেই প্রলয়ংকরী সিডরের রাত। সকাল বেলা তখনো
বুঝিনি কত ভয়াবহ ছিলো সিডরের তান্ডবতা; কারণ দুয়েকটা গাছ উপড়ে যাওয়া আর সাধারণ
ঝড়ের লক্ষণ ছাড়া তেমন কিছু চোখে পড়েনি খুলনাতে। সময় পার হতে লাগলো আর সিডরের
তান্ডবতায় ক্ষয়-ক্ষতি আর প্রানহানির খবর আসতে লাগলো। বাকীটুকু আপনারা জানেনে, বাংলাদেশের
ইতিহাসের সবচেয়ে প্রলয়ংকরী সেই সিডর-ঝড় কিভাবে পঙ্গু বানিয়ে দিয়েছিলো পুরো দক্ষিনাঞ্চলকে।
পরের দিন পত্রিকায় সুন্দরবনের ছবি দেখে কান্না চেপে
রাখতে পারিনি। নিজের জীবন দিয়ে আমাদেরকে রক্ষা করে গেলো সেই প্রমত্ত সুন্দরী
সুন্দরবন। সেদিন ফুল-ফল লতা পাতায় শোভিত যে বাহারী সুন্দরবনকে দেখেছিলাম, আমার
জীবন বাঁচাতে সে যে এইভাবে আত্মাহুতি দেবে, সিডর ঠেকাতে এমন কংকাল রুপ ধারণ করবে,
তা স্বচক্ষে না দেখলে হয়তো বিশ্বাসই করতাম না।
সেই সুন্দরবন, যে আমার জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বিলিয়ে
দিলো; আজ তারই ধ্বংশের ব্যাবস্থা করা হচ্ছে। অথচ আমি কি নির্বিকার! আপনারা আমাকে
মীরজাফর বলুন!