'ইয়া নবি সালাম আলাইকা'
মিলাদুন্নবী, নজরুল-মানস এবং ইসলামি গান
HAR Gibb বলেন 'well, then, if the Quran where his own composition other men could rival it. Let them produce ten verses like it. If they could not (and it is obvious that they could not), then let them accept the Quran as an outstanding exegetical miracle.' [Mohammedanism, London]
এর পেছনে কারণ কি? বসওয়ার্থ স্মিথ বলেন, 'মহম্মদ বলেছেন এটা অলৌকিক। আসলেই এটা অলৌকিক।' একটি গ্রন্থ একটি জাতি একটি আদর্শ একটি প্রার্থনা। এটাই কোরান। বসন্ত কুমার বসু বলেন,' এটা সত্যি আশ্চযের বিষয় যে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বইটি এসেছে একজন অশিক্ষিত মানুষের হাত দিয়ে।' এর সাথে ভিন্নমত আছে, যেমন লিখেছেন অধ্যাপক পামার যে, আরবের সকল শ্রেষ্ঠ লেখকের একজনও এর সমমানের একটি লাইন লিখতে পারে নাই। [That the best of the Arab writers has never succeeded in producing anything equal in merit to the Quran.] এখানেই নজরুলের শ্রেষ্ঠত্ব। তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় চিন্তাবিদ। তাঁর রচিত প্রথম ইসলামি গান 'রমজানের ঐ রোজার শেষে' সম্ভবত বাংলার সবচে জনপ্রিয় গান। সৃষ্টিকর্তার খাস রহমত ছাড়া এরকম কিংবদন্তীর জন্ম হতে পারেনা। ইসলামি গানগুলোতে তিনি যেন তাঁর কথাই বলে গেছেনঃ দেশে দেশে গেয়ে বেড়াই লয়ে তোমার নাম...
৩। নজরুল বিরচিত প্রায় ২৮০টি ইসলামি গান পর্যালোচনা করলে আমরা অনুভব করি, এগুলো বেশ পরিকল্পিতভাবে লিখিত। ইসলামে বর্ণিত তথ্যমালা তার গানের অন্যতম উপাদান। পরম সৃষ্টিকর্তা রাব্বুল আলামিন এবং মহানবী হযরতের মহিমা বর্ণনায় তিনি যথেষ্ট সংবেদনশীল ছিলেন। আল্লাহ্ এবং নবীজীর প্রশংসা করেছেন তিনি এইভাবে: ‘(আমি) আল্লাহ্ নামের বীজ বুনেছি এবার মনের মাঠে / ফলবে ফসল বেচব তারে কেয়ামতের হাটে।’ এবং ‘হে মদিনার চাঁদ, জ্যোতিতে তোমার / আঁধার ধরার মুখে ফোটাও হাসি।’ কোনো কোনো গবেষক নজরুলের ইসলামি গানগুলোকে লঘু সঙ্গীত পর্যায়ের গান বললেও, পরবর্তী সময়ে তার এই সৃষ্টি বাংলা গানকে প্রভাবিত করেছে সন্দেহ নেই। ইসলামি গানে তিনি সুচারুভাবে ইসলামি ঘটনা এবং শব্দ-উপমা ব্যবহার করেছেন। আরবি-ফার্সি ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন বলে তার পক্ষে ঈমান-আখলাকের ইতিবাচক কাঠমোর ভেতর গানগুলো রচনা এবং সুরারোপ করা সম্ভব হয়েছে। ভাওয়াইয়া গানের অন্যতম শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমেদ তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘আমার শিল্পীজীবনের কথা’য় লিখেছেন, কবি নজরুল তার রচিত ইসলামি গানের প্রায় ৯৫ ভাগই নিজে সুরারোপ করেছেন। এটি ৮০ শতাংশ হবে। কারণ গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, ৪৬টি গানে সুরারোপ করেছেন অন্যরা। যেমন; কমল দাশগুপ্ত, কে মল্লিক, গিরীন চক্রবর্তী, পিয়ারু কাওয়াল, সুবল দাশগুপ্ত, দেলওয়ার হোসেন এবং একটি গান যৌথভাবে আবদুল করিম খাঁ ও আব্বাসউদ্দীন আহমেদ।
হজরত মুহম্মদ [সা] এর গুণগান তিনি অনন্য মহিমায় প্রচার করেছেন। 'ত্রিভুবনের প্রিয় মুহম্মদ' 'আসিছেন হাবিবে খোদা' 'মুহম্মদের নাম জপিছিলি' ইত্যাদি গান আজো সমানভাবে জনপ্রিয়। বিশেষ দিনগুলোতে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে এ গানগুলো প্রচারিত হয়, যেমন আজ হচ্ছে।
নজরুল চিরদিনের।
রফিক সুলায়মান ।। ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী, জানুয়ারি ৪, ২০১৫।