|| বাংলার নবাবের ওয়েবসাইটে স্বাগতম ||
আমি রুষে উঠে যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া | ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া।

সোমবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৫

ধর্ষনের দায় মূলত ধর্ষকের পাশবিকতার উপরেই বর্তায়

নববর্ষে টিএসসিতে নারীদের যৌন হয়রানি নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি দেখছি আমার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা বন্ধু-বান্ধব, সিনিয়র, জুনিয়র অনেকের মাঝেই।

সমস্যাটা হলো, যুক্তির দুই পিঠেই বহুল সংখ্যক মানুষের সমর্থণ রয়েছে। বিভ্রান্তির বিষয়টি তাহলে কী??? ‘ধর্ষণের পেছনে নারীর অশ্লীল পোষাকই দায়ী কিনা’ নাকি ‘ভিক্টিম নারীকেই কেন দায়ী করা হচ্ছে?’

বিভ্রান্তিটি সৃষ্টি হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে বলে আমার মনে হয়। 

তার আগে ঘটনাটি জানা দরকার। বাংলা ১৪২২ এর পহেলা বৈশাখের দিন (ইংরেজি এপ্রিল ১৪, ২০১৫) টিএসসিতে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন কয়েকজন নারী(১)। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্র ইউনিয়ন নেতা লিটন নন্দী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলা নতুন বছর উপলক্ষে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানুষের প্রচণ্ড ভিড় ছিল। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে শাহবাগ থেকে টিএসসি আসার পথে তাঁরা কয়েকজন দেখেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে ৩০-৩৫ জনের একদল যুবক বেশ কয়েকজন নারীকে যৌন হয়রানি করছে। তারা কারও কারও শাড়ি ধরে টান দিচ্ছিল। কয়েকজনকে তারা বিবস্ত্রও করে ফেলে। এ সময় সেখানে বাধা দিতে গেলে ওই যুবকদের ধাক্কায় তিনি পড়ে যান এবং তাঁর হাত ভেঙে যায়।

ঘটনার পরপরই ফেইসবুক সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার ঝড় শুরু হয়। তীব্র ঘৃণার পাশাপাশি দোষীদের শনাক্ত করে তড়িৎ পদক্ষেপের আহবান জানান সকলেই। 

তবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানানোর সময় অনেকেই দোষীদের শাস্তি দাবী করার পাশাপাশি নারীদের আরও শালীন হওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। আর, এতেই বাধে বিপত্তি। 

বিশেষত, যারা বেশি মাত্রায় প্রগতিশীল (আলোচ্য বর্ণনায় ১ম গ্রুপ), তাদের মতে, নারীদের শালীনতার কথা বলা মানেই হলো ধর্ষণকান্ডের জন্য নারীদের দায়ী করা আর ধর্ষকদের উৎসাহিত করা। 

কথা হলো, নারী যখন এখানে ভিক্টিম, তখন নারীকে শালীন হতে বলা কি নারীর প্রতি দোষারোপ নয়??? অকাট্য যুক্তি। আরও বলা হচ্ছে, নারীকে শালীন হতে বলার মধ্য দিয়ে এই গ্রুপটি মুলতঃ নারীকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখতে চায়। নারী উন্নয়ন বা নারীর ক্ষমতায়নে তারা বাধার সৃষ্টি করছে। প্রকৃত অর্থে, তারা নারীকে চার দেয়ালে বন্দী করে বাংলাদেশকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান বানাতে চায়। 
তাহলে যারা নারীকে শালীন হওয়ার কথা বলছেন (আলোচ্য বর্ণনায় ২য় গ্রুপ), তারা আসলে কোন বিষয়টি মাথায় রেখে এই কথা বলছেন? তারা কী নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না? তারা কি ‘ধর্ষণের পেছনে নারীর অশ্লীলতাকেই দায়ী করছেন’? 

দ্বিতীয় গ্রুপটির যারা সত্যিকারার্থে নারীর শুভাকাঙ্খী, যারা নারীর ক্ষমতায়ন চান কিন্তু নারীকে ভোগ্যপন্য বানাতে চান না, তাদেরও রয়েছে কিছু আশংকার কারণ। প্রথম গ্রুপটির মধ্যে একটা বড় অংশ আছেন যাদের মতে “শাড়ি নাভীর নীচে থাকুক বা উপরে, আপনার শিশ্নানুভুতি সামলাতে না পারলে তা বরং কেটে ফেলুন”(২) মতে বিশ্বাসী। ২য় গ্রুপটির মতে, কি অদ্ভুত ব্যাপার! নারীকে এস্যাল্টের বিরুদ্ধে বলতে গেলে তার অশ্লীলতাকে উস্কে দিতে হবে? তাদের মতে, নারীর প্রতি যেকোন ধরণের, হোক সেটা ধর্ষন বা অন্যকিছু, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত থাকুক, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক, কিন্তু নারীর অশ্লীলতাও গ্রহনযোগ্য নয়।
____________
।।এই হচ্ছে দুটো গ্রুপের অবস্থান।।
____________

আমার মতে, ১ম ও ২য় গ্রুপ – দুটোর মধ্যেই কিছু ব্যাতিক্রম আছে, যারা আসলেই নারীকে অশ্লীল, ভোগ্যপন্য বানাতে চায়, যারা আসলেই নারীকে চারদেয়ালে বন্দি করে রাখতে চায়। আসুন তাদের আমরা বয়কট করি। আল্লাহর কাছে তাদের হেদায়াত প্রত্যাশা করি। 

ব্যাতিক্রম বাদ দিলে দুটো গ্রুপই নারীর নিরাপত্তা চায়, নারীর বিরুদ্ধে এসাল্টের বিচার চায়। দুটো গ্রুপই চায় এ ধরা হোক নারীর নিরাপদ আবাস, পুরুষের দৃষ্টি হোক সংযত। 

নারীর শালীনতার কথা বললে তার বিরুদ্ধে হওয়া এসাল্টকে সমর্থন করা হয় না। নারীর শালীনতার কথা বললে এটা বলা হয়না যে, ‘ধর্ষণের পেছনে নারীর অশ্লীল পোষাকই দায়ী’। আমার পরিচিতের মধ্যে কাউকেই “ধর্ষণের দায় নারীর উপর বর্তায়” এমন মতের দেখিনি। 

পরিশেষে প্রিয় ওয়ালিদ ভাইয়ের সুরে বলিঃ 
“এটা অস্বীকার করা যাবে না যে অনেক সময় মেয়েদের খোলামেলা পোষাক শ্লীলতাহানি বা ইভ টিজিং এর একটা বড় কারন। কিন্তু কখনই একমাত্র বা প্রধান কারন নয়। লাম্পট্য বা ধর্ষনের দায় মূলত ধর্ষকের পাশবিকতার উপরেই বর্তায়”(৩)। 


তথ্যসূত্রঃ