|| বাংলার নবাবের ওয়েবসাইটে স্বাগতম ||
আমি রুষে উঠে যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া | ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া।

শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০১৬

হ্যাকিং ! নাকি চুরি ?

বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরি হয়েছে। বাংকের কর্তারা বলছে- চুরি নয় -হ্যাক। আশ্চর্য ! তারা হ্যাক ও চুরির তফাৎ বুঝবে না, এ কেমন কথা।?

কত টাকা?

৮০০ কোটি !

৮ কোটি না, ৮০ কোটি না-আট'শ ! ৯৯ কোটি, ৫০০ কোটি, ৭০০ কোটি-তারপরে-৮০০ কোটি !
ক্যামনে যে বুঝাই ৮০০ কোটি টাকা কত বিশাল !

১ কোটি = ২৩ কেজি। সুতরাং- ২৩ x ৮০০= ১৮ হাজার ৪'শ কেজি ÷ ৪০ কেজি বা ১ মন = ৪৬০ মন !

কীভাবে যে বুঝাই ৮০০ কোটি কতো বিশাল অংক ! আচ্ছা বাদ দেন। ভাবতেই কলিজা ছ্যাৎ করে উঠে।

কোথা থেকে টাকা চুরি হয়েছে?
ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে।

এর দায় কার? ক্ষতিপূরণ কে দিবে?
অবশ্যই ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক দিবে। আমেরিকার বাপের টাকা না - আমাদের টাকা।

কিন্তু তারা দিবে না। আশ্চর্য !

অর্থমন্ত্রী আবুল মালে মামলা করার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে। তবুও দিবেনা। আবারও আশ্চর্য !
 
কেন?
ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বলছে- তাদের সিস্টেম হ্যাক হয়নি।
তাদের মুখপাত্র আন্দ্রিয়া প্রিস্ট বলছে-
‘পেমেন্ট নির্দেশনাটি সমপূর্ণভাবে সুইফট মেসেজিং সিস্টেম অনুযায়ী অনুমোদিত হয়েছে। অনুসরণ করা হয়েছে অনুমোদনের আদর্শ প্রটোকল।'

ফেডারেল ব্যাংকের কথা যৌক্তিক এবং তারা সত্য বলছে । কারণ-
টাকা চুরি হয়েছে ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখে। খবর প্রকাশ পেয়েছে ৩৪ দিন পর। তাও ফিলিপাইনি পত্রিকা ইনকোয়েরার-এ প্রকাশিত হবার পর !
তারা প্রকাশ না করলে 'কিছু কথা থাক না গোপন'- হয়েই থেকে যেতো!

যদি দোষ ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের হতো, চুরির ঘটনা প্রকাশ করাতে ভয় ছিলো না।
কিন্তু করেনি?-

কেন?

কবি এখানে নীরব !

অর্থমন্ত্রীর কথা টোটালি রাবিশ ! সে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করবে ! হাহ !
বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বিচি !

ইট'স ক্লিয়ার এজ ডে লাইট-ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। কেন চেষ্টা হয়েছে তার পিছনেও কারণ আছে।
আমরা এখন কারণ গুলো দেখবো-

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার এরিয়া, ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো খুবই সুরক্ষিত, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ। এমনকি এন্টি-ভাইরাস প্রুফ। সুইফট কোড হ্যাক করা জাস্ট ইম্পসিবল। থার্ড পারসন কারো পক্ষে সম্ভব না সিস্টেমে ঢুকা। লজিক্যালি এখানে হ্যাকিং এর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়।

যে সুইফট মেসেজিং সিস্টেম ফলো করে টাকা ট্রান্সফার হয়েছে, সেটা কী জিনিস ?
কীভাবে একটা আন্তর্জাতিক লেনদেন সম্পন্ন হয়?
বহিরাগত কেউ সুইফট মেসেজ ব্যবহার করে টাকা চুরি করতে পারবে?
প্রচলিত আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে রাষ্ট্রীয় ব্যাংক হ্যাক করে টাকা চুরি কী আদৌ সম্ভব?

উত্তর-
এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তরের সংকেতলিপিকে সুইফট বলে। এটা অ্যাবৃভিয়েট ওয়ার্ড। যার ফুল মিনিং- 'সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটি রুম আছে। ডিলিং রুম। বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংকের উচ্চ-পর্যায়ের কর্মকর্তারা অনুমোদন করে ডিলিং রুমে পাঠায়।
ডিলিং রুমে তিনটি বিভাগ কাজ করে।
১/ ফ্রন্ট অফিস- বার্তা তৈরি করা।
২/ মিডল অফিস- বার্তাটি পাঠানোর কাজ করে।
৩/ ব্যাক অফিস- বার্তা অনুযায়ী লেনদেন হচ্ছে কিনা তা অবজার্ভ করে।

লেনদেনের পর অ্যাকাউন্টে কী পরিমাণ অর্থ আছে তা তদারকি করে ব্যাক অফিস।

এসব লেনদেনের প্রতিটি পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড থাকে। লগইন করে, ব্যাংক থেকে বার্তা পাঠানো হয় সুইফটের মাধ্যমে। পাঠাতেও আলাদা পাসওয়ার্ড ও ইউজার নেম লাগে।

আবার এটিএম কার্ডের মতো এখানেও কার্ড রয়েছে। নিয়মানুযায়ী এই সিস্টেমে ঢুকে লেনদেন সম্পন্ন করা হয়।

সূত্রমতে, ৪ তারিখ বিকেল ৫ টায় কয়েকজন কর্মকর্তা ডিলিং রুমে ঢুকে। ডিলিং রুমে বসে কাজ করে রাতের ৮ টা পর্যন্ত।

কাজ শেষে সিস্টেম বন্ধ করেনি ! শুরু থেকেই মেশিনে বিশেষ কার্ডটিও লাগানো ছিলো। ওই সময়েই টাকা লেনদেন হয়।

কারা ওই কর্মকর্তা? কার্ড কীভাবে মেশিনে ফেলে রাখে ?

তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম-মনে ছিলনা। ভুল করে সিস্টেম বন্ধ করেনি- কার্ড বের করেনি।

তবুও লেনদেন সম্ভব কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকে !

কারণ- সুইফটের মাধ্যমে পাঠানো বার্তাগুলো অনেক সিক্রেট। তাছাড়া এগুলো কোনো বাক্য নয়। সংকেত মাত্র। সুইফটের মাধ্যমে এগুলো সাংকেতিক আকারে যায়। হ্যাকাররা যদি মাঝেপথে হ্যাক করে, তবে সাংকেতিক শব্দ থেকে ওই ভাষা উদ্ধার করতে পারবে না। ইটস ইম্পসিবল।

অধিকন্তু, বার্তা যাবার সময় অটোমেটিক্যালি পরিবর্তন হতে থাকে। মাঝপথে হ্যাক হলে-যেখানে বার্তা যাচ্ছে -সেখানে ইউজার নেম পরিবর্তন হয়ে যাবে। ফলে সিস্টেম কাজ করবে না।

কিন্তু ৮'শ কোটি টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনো হেরফের ঘটেনি। নিয়মানুযায়ী লেনদেন হয়েছে।
অ্যাডভাইসগুলো ১০০ % অথেনটিক ছিল !

আবার- এতো সিস্টেম ফলো করার পরেও ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে নোটিফিকেশন যায়।

তারা দেখলো টাকাটা ব্যক্তির নামে ট্রান্সফার হয়েছে ! অথচ এসব লেনদেন কোনো ব্যক্তির নামে হয় না।
প্রতিষ্ঠানের নামে হয়।

ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে মেইল করা হলো বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। কিন্তু ডিলিং রুমে কেউ নেই বা মেইলের রিপ্লাই দেয়া হয়নি। ফলে প্রথম ট্রান্সঅ্যাকশন আটকানো যায়নি।

আরো ৩০ টি বার্তা গেছে টাকা ট্রান্সফারের। এবার ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে সন্দেহজনক ঠেকলো।

তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কনফার্মেশনের অপেক্ষায় লেনদেন ব্লক করে দিলো।

নতুবা টার্গেট ছিলো ৭ হাজার ৬ শ ৬০ কোটি টাকা চুরি করার !!

৭ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কনফার্ম করলো লেনদেনের এডভাইসগুলো তাদের নয়।

তখনই চুরি ধরা খায়। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারী মাসের ৭ তারিখে। ৩৪ দিন আগে পরিস্কার হয়ে যায়-চুরি হয়েছে !

কিন্তু কেন ফাঁস হলো না এতোদিন?

কবি আবারও নীরব !!

টাইমিং দেখুন-
বৃহস্পতিবারে ঘটেছে ঘটনা। অফিস ক্লোজিং টাইম ২:৩০। ধরুন ৪ টা। কিন্তু কাজ হয়েছে ৫ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত। পরেরদিন শুক্রবার। সরকারী বন্ধ। শনিবারেও বন্ধ। এর পরদিন রবিবার। মানে আমেরিকায় বন্ধ! চীনের নববর্ষ উপলক্ষে ফিলিপাইনে বন্ধ সোমবারে।

বন্ধের দিনে তড়িৎ অ্যাকশন নেয়া সম্ভব নয় বলেই উপযুক্ত একটা সময় বেছে নেয়া।

অর্থাৎ প্রতিটা ধাপ পূর্ব পরিকল্পিত !
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক বড় চক্র এর সঙ্গে জড়িত না থাকেল-এগুলো কখনই সম্ভব নয়।
ফেডারেল ব্যাংক যদি দোষী হয়-তবে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে প্রতিনিধি না পাঠিয়ে ফিলিপাইনে পাঠিয়েছিল কেন?

কবি এখানে এসে তব্দা খায় !

এবার আসি ইন্টারেস্টিং নিউজে-
আমাদের সুইফটের নিয়ন্ত্রণ থাকে ভারতের হাতে ! !!!!!

চুরি যখন ফাঁস হলো- দাদাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো - ইমার্জেন্সি বাংলাদেশে আসতে ! বলল দরকার হলে অন অ্যারাইভেল ভিসা দেব-
কিন্তু ‘আড়ালে থাকতে দাও, তুমি কাছে ডেকো না' - বলে তাহারা আসিলেন না। ! পুনরায় আশ্চর্য !
শুধু তাই নয়-
ব্যাংকের জন্য বাহিরে থেকে আইটি সফটওয়্যার আনা হয়। যা অধিকাংশ আসে ভারত থেকে।

আইটি সফটওয়্যার আনতে বিশেষজ্ঞ টিম থেকে পরামর্শে দেয়া হয়। যেখানে ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাকেশ আস্তানা হচ্ছে বিশেষ পরামর্শ দাতা।

ভ্যালা বলে -হায়রে ! এখানেও দাদারা !
এবং ভেরি ভেরি ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে-রাকেশ আস্তানা-ই এখন তদন্ত কমিটির বিশেষজ্ঞ। pacman emoticon

আপনারা সর্ষের মধ্যে ভূতের কথা শুনেছেন। এখানে ভুতের গায়ে সর্ষে মাইখ্যা দিসে !

যাক- সুকুমার রায় বলেছেন-
বেশ বলেছো, ঢের বলেছো
ঐখানে দাও দাঁড়ি,
হাটের মাঝে ভাঙ্গবে কেন দাদা বাবুর হাঁড়ি ?

গভীরের নিউজ হচ্ছে-বর্তমানে যেসব সফটওয়্যার রয়েছে, তা ক্রয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের চাপ ছিলো।

পত্রিকার তথ্যমতে-
যেসব কর্মকর্তাদের প্রতি সন্দেহ, তাদের একাধিক ব্যক্তি গভর্নরের পছন্দের লোক। যাদের কেউ কেউ সেরা ব্যাংকারও নির্বাচিত হয়েছিল !

আপনাদের কি মনে হচ্ছেনা- পুরো বিষয়টি সুদীর্ঘ পরিকল্পনা মোতাবেক ধীরে ধীরে সুসম্পন্ন হয়েছে?

দেশের হাই প্রোফাইলের অনেকবড় চক্র এর সঙ্গে জড়িত থাকার সম্ভাবনা বেশি !

এর আগে ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করেছে হলমার্ক গ্রুপ। আমরা আশ্চর্য হইনি।

আবুল মাল বলেছিল ৪ হাজার কোটি কোনো ব্যাপারই না। আমরা আশ্চর্য হইনি।

কিন্তু ৮'শ কোটি টাকা চুরি দেখে আমরা আশ্চর্য ! কারণ এই চুরির সিস্টেম বড্ড ভয়াবহ। ভবিষ্যতের অন্ধকার!
সমালোচনার হাত থেকে বাঁচতে ব্যাংক কর্তাব্যক্তিরা ও আবুল মাল বারবার করে বলছে যে কিছু টাকা উদ্ধার হয়েছে ! বাকিগুলোও হবে।

জগলুর একটা ঘটনা বলি-

ভ্যালা বসে আছে রিক্সায়। জগলু সিড়ি বেয়ে নামছে। দুজনে মুভি দেখতে যাবে। হঠাৎ পা পিছলে গোত্তা খেয়ে, গড়াগড়ি দিয়ে জগলু এসে পড়ল রাস্তায়।
ভ্যালা লাফ মেরে রিক্সা থেকে নেমে, জগলুর মাথা কোলে নিয়ে বসলো। গায়ে হাত বুলায় -'আহারে ! দোস্ত ব্যথা পাইসে রে ! গায়ে হাত বুলায় -'দোস্ত ব্যথা পাইসে রে' বলে। শেষে সান্ত্বনা দিয়ে বলল- 'কিন্তু দোস্ত আইছোস জলদি।' pacman emoticon
পড়ে গিয়ে জগলুর অবস্থা যায় যায়, সেদিকে খেয়াল নাই। কিন্তু পড়ে যাওয়াতে জলদি পৌছেছে বলে সান্ত্বনা !

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ভেদ করে- একটা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা লুট পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম !

সেই রহস্যের কুলা কিনারার খবর নাই-দুই কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে-বলে জাতিকে সান্ত্বনা দেয়া হচ্ছে সোনা?

কিন্তু সেই টাকা আসলেই কী উদ্ধার হয়েছে? হলে-কীভাবে হয়েছে?

কবি এখানে মূর্ছা গেছে !

এই টাকা কী উদ্ধার করা সম্ভব?


________