|| বাংলার নবাবের ওয়েবসাইটে স্বাগতম ||
আমি রুষে উঠে যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া | ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া।

বুধবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১০

এ কোন গন্তব্যের দিকে ধেয়ে চলেছি আমরা?


নিঃসন্দেহে সময়টা খুবই খারাপ যাচ্ছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের সকল বখাটে তরুণ-যুবক যেন একত্রে জোট বেধেছে, একসঙ্গে মাঠে নেমেছে। ঈভটিজিং এর মাত্রা এত বেশি পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে যে এদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করছে। কি ঘরে, কি বাইরে, স্কুলের পথে বা শপিং মলে—কোথাও স্বস্তিতে নেই আমাদের মেয়েরা। প্রতিদিনের পত্রিকার পাতাই এর সাক্ষ্য বহন করছে। ঈভ টিজিং এর ঘটনার সত্যতা প্রমানের জন্য এখন কোন সুত্রের দরকার পড়েনা। চরম হতাশা আর লজ্জায় ডুবে গিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকছেনা ভুক্তভুগী এই মেয়েদের। অবস্থা এতই বেগতিক যে মেয়ের বাবারা যেন মেয়ের জন্ম দিয়ে চরম অন্যায় করে ফেলেছেন। এর জন্য তাদের এই শাস্তি ভোগ করতেই হবে।

ঈভটিজিং এর বিরুদ্ধে প্রতিদিন মিছিল মিটিংও কম হচ্ছেনা। সভা-সেমিনারে বক্তৃতার ফুলঝুরি দেখা গেলেও এই পরিস্থিতির উন্নতির কোন লক্ষণ নেই। বরং তা শত সহস্র হারে বেড়ে চলেছে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেও এর প্রতিকারে কোন চিত্র আমাদের চোখে পড়ছেনা কেন? সরকারের পেটোয়া বাহিনী বিরোধীদল দমনে এমন সিদ্ধহস্ত হলেও বখাটেদের রুখতে পারছেনা কেন? নাকি বখাটেরা সরকারী দলের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে প্রশাসনকে কব্জায় নিয়ে নিয়েছে? অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আমরা কোন মনুষ্য জগতে বসবাস করছিনা। আমরা বসবাস করছি এমন নীতিহীন এক অন্ধকার জগতে যেখানে মেয়েদের জন্মগ্রহণ করাই যেন আজম্ম পাপ। এ কোন গন্তব্যের দিকে ধেয়ে চলেছি আমরা? এর  প্রতিকারের কি কোন পথ খোলা নেই?

কেন আজ এই চরম হতাশাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো? কেন এদেশে তরুণেরা তাদের লেখাপড়া বাদ দিয়ে এমন অনৈতিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে? কেন আমাদের মেয়েরা স্বাধীনভাবে পথ চলতে গিয়ে বারবার এমন হোঁচট খাচ্ছে? আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি কি কারণে আমাদের তরুণ সম্প্রদায়ের এমন অধঃপতন? ঠিক কি কারণে আমাদের তরুণেরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের এই যুগে এসেও অন্ধকারের অমানিশায় হাবুডুবু খাচ্ছে? দেশে আইন আদালত বলতে কি কিছু নেই যে শত শত মানুষের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে সপ্তম-শ্রেণী পড়ুয়া স্কুলগামী ছাত্রীকে চুমু খেয়ে বীরদর্পে স্থানত্যাগ করে বখাটেরা? নাকি আমরা আমাদের বিবেক-বিবেচনা হারিয়ে সেন্সলেস যন্ত্রমানবে পরিণত হয়েছি যে এই সুযোগে বখাটেরা তাদের লালসা চরিতার্থ করার ঢাউস সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে?

‘এখন সময় হয়েছে সচেতনতার’ এমন কথা বলে কিন্তু পার পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ, আমি হয়তো সচেতন, আপনিও হয়তো সচেতন, কিন্তু যেই বখাটে যুবক বা তরুণটি এই কাজে লিপ্ত সে কি সচেতন? না, সে কিন্ত সচেতন নয়। সচেতন হলে সে এই কাজ করতে পারতোনা। অতএব, আসুন; আমাদের তরুণ সম্প্রদায়ে এই অধঃপতনের পিছনের কারণগুলো খুজে বের করি আর এর প্রতিকারের পথে অগ্রসর হই। নতুবা, আমরা বিবেকহীন, জ্ঞানহীন বর্বর জাতিতে পরিণত হব। চরম লাঞ্চনাকর অবজ্ঞাপূর্ণ জীবন ছাড়া আমাদের সামনে আর কোন রাস্তাই খোলা থাকবেনা।

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব আর মানুষের সেরা জীব হওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে তার মনুষ্যত্ব। কিন্তু এই মনুষ্যত্ব তো আর এমনিতেই অর্জন হয় না। এর জন্য চাই নৈতিক শিক্ষা, ধর্মীয় অনুশাসন। শিশুকাল হতে যদি কোন মানবসন্তান নৈতিক শিক্ষা আর ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে বড় হয়, তাহলে তার পক্ষে এমন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়া সম্ভব হয় না। রুঢ় হলেও বাস্তব সত্য এই যে আমরা সেই নৈতিক শিক্ষা, ধর্মীয় অনুশাসন থেকে এখন যোজন যোজন মাইল দূরে অবস্থান করছি। আমাদের তরুণ সম্প্রদায়ের অধঃপতনের এটা একটা অন্যতম প্রধান কারণ। ঈভটিজিং নামক সামাজিক ক্যান্সার হতে মুক্তি পেতে হলে নৈতিক শিক্ষা আর ধর্মীয় অনুশাসনের উপর জোর দেওয়ার কোন বিকল্প নেই।

আরেকটি বিশেষ বিষয় এক্ষেত্রে গুরুত্বের দাবীদার। আর তা হলো আইন শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি। মুখে মুখে যুদ্ধ ঘোষনা বা ‘অপরাধী যে দলের হোক না কেন কেউ আইনের বাইরে নয়’ এমন কথা বলে কিন্তু আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব নয়। প্রয়োজন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ। অপরাধীদের এমন দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দিতে হবে যে কেউ যেন দ্বিতীয়বার এই কাজ করার সাহস দেখাতে না পারে। প্রতিটি ঘটনারই দ্রুত বিচারের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। সরকারকে এই বিষয়টির উপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে তড়িৎ ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হবে।