আমি রাজনীতি করিনা, কিন্তু রাজনীতি আমাকে করে!!!!!!!!
পাঠক হিসেবে নিয়মিত হলেও, লেখক হিসেবে আমি একেবারেই অনিয়মিত। কালে ভদ্রে দু'চারটে কথা লিখে ফেলি। আমার এই স্বল্প লেখার মধ্যে তাই রাজনৈতিক বা রাজনীতি সংশ্লিষ্ট লেখা নেহাতই কম। সহজ করে বললে, আমি রাজনীতি একেবারেই অপছন্দ করি। আর তা যদি হয় বাংলাদেশি নষ্ট রাজনীতি, তাহলে দৌড়ে পালাবার অবস্থা। রাজনীতি নিয়ে এত অবতরণিকা করার উদ্দেশ্য তো কিছু রয়েছেই। সাম্প্রতিক সময়ে এমন এক ঘটনার সম্মুখীন হলাম যে, মনে হচ্ছে আমি রাজনীতি না করলেও রাজনীতি আমাকে করে।
আগেই বলেছি, রাজনীতি আমার নেহাতই অপছন্দের বিষয়। আমার এই লেখাটি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের বিপক্ষে যাবে। সেটা নিতান্তই আমার অভিজ্ঞতার সাথে প্রাসঙ্গিক। ভিন্ন প্রেক্ষিতে অন্য কারো বিপক্ষেও যেতে পারে।
যাইহোক, মুল কথায় আসি। রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা পুরাতন কোন বিষয় নয়। আমাদের দেশের নেতানেত্রীরা মনে করেন, রাজনীতি করে দেশটাকে তারা কিনে নিয়েছেন। প্রাচীন যুগে রাজা-মহারাজেরা দেশটাকে নিজেদের মনে করতো কিনা জানিনা। বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক নেতা নামের এই নব্য রাজারা যে দেশটাকে নিজেদের বাবার সম্পত্তি মনে করেন সেটা দেশাবাসী মাত্রই জানে। হাল আমলে এই নব্য রাজাদের আচরণ এই মাত্রায় পৌঁছেছে যে ম্যাঙ্গো-পিপলের মৌলিক অধিকার কিছু আছে বলে মনে হয় না।
নিয়মিত পত্রিকা পড়েন বা টিভি দেখেন, আর বর্তমান সময়ের সমগ্র দেশের রাস্তাঘাটের অবস্থা জানেননা এমন মানুষ আপনি খুঁজে পাবেননা। রাস্তা তো নয় যেন এক একটি মৃত্যুকুপ। সেইসাথে আসন্ন ঈদে শহর ছেড়ে গ্রামের আপনজনদের সাথে ঈদ করতে চাওয়া মানুষের ভীড়। সব মিলিয়ে পরিস্থিতির ভয়াবহতা বর্ণনা করার মত শব্দ বাংলা ভাষায় আছে কিনা আমার জানা নেই।
এহেন অবস্থায় কোন রাজনৈতিক নেতা যদি ক্ষমতার জোরে একটা বিভাগীয় শহর থেকে রাজধানীতে যাতায়াতের জন্য যতগুলো বাস রয়েছে তার সবগুলোকে শুধুমাত্র তার নিজের লোকের জন্য বুকিং দিয়ে রাখেন তাহলে অবস্থাটা কোথায় গিয়ে দাড়ায়? কয়েকদিন আগে গিয়েছিলাম খুলনার রয়্যাল মোড়ে, ঈদের দু-একদিন পরে ঢাকায় যাওয়ার জন্য টিকিট কাটতে। সম্ভবত চলতি মাসের ১৫/১৬ তারিখের ঘটনা। কাউন্টার থেকে আমাকে জানানো হলো যে ২০ তারিখে গেলে আমি টিকিট নিয়ে আসতে পারবো। যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে জানতে পারলাম ইন্টার্নাল কোন কারনে উনারা ২৪ তারিখের আগে কিছু কনফার্ম করতে পারবেন না। গত্যন্তরহীন হয়ে আমি আবার গেলাম ২৪ তারিখে। এবার যেয়ে যা শুনলাম তাতে মনে হলো এদেশীয় রাজনীতির গুষ্টি কিলাই। শহরের মাননীয় মেয়র, ডিসি ও এসপি বা শুধুমাত্র তাদের সুপারিশকৃত তোষামোদকারীদের জন্য সোহাগ আর গ্রীনলাইনের এসি (ভলবো) বাসের আগামী ২, ৩ ও ৪ সেপ্টেম্বর তারিখের সকল টিকিট বুকিং করা হয়েছে। শুধুমাত্র এই তিন মান্যবরের জন্য যদি দুটো কোম্পানীর এতগুলো বাস পরপর তিনদিনের জন্য বরাদ্ধ দিয়ে রাখা হয়, বাকী সবাই কি তবে আঙুল চুষবে? বলি ভাই তোরা মান্যবর, মহামান্য রাজাধিরাজ, তাই বলে এত স্বেচ্ছাচারিতা! আমার হাতে ক্ষমতা আছে, তাই বলে যা ইচ্ছা তাই করতে হবে? দেশে কি আর মানুষজন আছে? নাকি সবাই আওয়ামী নেতাদের আপনজন, তোষামোদকারী?
এতদিন জানতাম বাসের টিটিকপ্রাপ্তির জন্য কাউন্টারের সামনে লাইন দিতে হয়, এখন দেখছি এর জন্য বাআল (বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ)-এর নেতার কাছে ধরণা দিতে হবে। অবশ্য পাবলিক টয়লেট দখল করা যে দলের নেতাদের স্বভাব, তাদের কাছে বাসের টিকিট তো মহামূল্য কোহিনূর!
শুরুতেই বলেছিলাম, আমি রাজনীতি করিনা। কারোর তোষামোদ করার অভ্যাস আমার নেই। তাইলে আমার কী হবে? আমার মত রাজনীতির কাছ ঘেষেনা এমন যারা রয়েছেন, তারা টিকিট পাবেননা? বলি, এখনো সময় আছে- আওয়ামিলীগ না হয়ে, মানুষ হ। অবশ্য আমি রাজনীতি না করলে কি হবে, রাজনীতি আমাকে করে, করবে।
নোটাবেনেঃ ফেইসবুকে শেখ হাসিনার মৃত্যু কামনা করে স্টাটাস দেওয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিকক্ষকে তলব করেছে হাইকোর্ট। আওয়ামিলীগের নেতাদের স্বাচ্ছাচারিতার কথা বলার জন্য আমাকে আবার না কি করা হয়!